ময়মনসিংহে ভাঙা হচ্ছে সত্যজিত রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি
ময়মনসিংহ শহরে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো হরিকিশোর রায়ের ঐতিহাসিক বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এ সিদ্ধান্তে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাস সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
ভবনটি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায়ের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। ময়মনসিংহ শহরের একটি রাস্তার নামও রয়েছে তার নামে ‘হরিকিশোর রায় রোড’।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই বাড়ির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য আছে, যা সংরক্ষণের দাবি রাখে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাড়িটি এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়, তবে চলতি বছরের জরিপে তা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
জানা গেছে, বাড়ির সামনের অংশ ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভেতরের কাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত। আপাতত ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও পুরো ভবন ধ্বংসের পথে।
শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান জানান, ‘২০১০ সালের পর থেকে ভবনটি ব্যবহার অযোগ্য ছিল। ঝুঁকির কারণে একবার মেরামতের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রতি মাসে ৪৭ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘উপযুক্ত অনুমতি নিয়ে এবং সব নিয়ম অনুসরণ করেই ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শেষে আপাতত একটি আধাপাকা ভবন এবং পরে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
ভবনটি সংরক্ষণ করে নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী জামান বলেন, ‘ভবনটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরামর্শে আমরা কাজ করছি।’
তবে লেখক ও কবি ফয়েজ আহমেদ এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এভাবে ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংস হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ময়মনসিংহের পরিচয় থাকবে না।’
এদিকে, ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জানান, ‘শিশু একাডেমি কীভাবে ভবনটি ভাঙছে, তা জানতে তাদের ডাকা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে