দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই আরটিজিএস চালু হবে: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম আরও সহজ ও দ্রুত করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে খুব শিগগিরই আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) ব্যবস্থা চালু করা হবে। একই সঙ্গে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন গভর্নর। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বণিক সমিতি, চেম্বার প্রতিনিধি, বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ–রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে গভর্নর বলেন, সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। সমুদ্র, পাহাড় ও সমতল নিয়ে গঠিত এই অঞ্চল দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বড় অংশের কেন্দ্রবিন্দু। তবে এসব সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দিতে আর্থিক খাতের শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অব্যবহৃত তহবিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে প্রত্যেক ব্যাংককে অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেনের উদ্যোগ নেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ।

বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম অফিসের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অর্থনীতি, ব্যাংকিং, বন্দর, কাস্টমস, রপ্তানি, কৃষি ও শিল্প খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। গভর্নর তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বিষয়ে সমাধান দেন এবং অন্যান্য বিষয়ে ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়নের আশ্বাস দেন।

সভাপতির বক্তব্যে মো. মকবুল হোসেন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে আর্থিক সাক্ষরতা অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।