যে কারণে মাইলস্টোনে উদ্ধার কাজ শুরুতে বিলম্ব

ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান সোমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ শেষ করে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যান। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে একাধিক সংস্থার কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে এই উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করেন। তবে, উদ্ধার কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার ব্যাপারে স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। অনেকেই দাবি করেন, সময়মতো উদ্ধার কাজ শুরু হলে নিহতদের সংখ্যা কম হতো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, উৎসুক জনতার ভিড়ই উদ্ধার কাজে বিলম্ব ঘটায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আশপাশের উৎসুক মানুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। এতেই দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে তৈরি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড়, যার ফলে, সময়মতো দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই পারেনি উদ্ধারকারী দল।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম; কিন্তু চারপাশে মানুষের ভিড় এত বেশি ছিল যে অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধার সরঞ্জাম পৌঁছানোই কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই ছবি ও ভিডিও তুলতে ব্যস্ত থাকায় উদ্ধার কাজে বারবার বিঘ্ন ঘটে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে কিছু সময় চক্কর কাটার পর হঠাৎ করে নিচে নেমে আসে বিমানটি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি ফাঁকা মাঠে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে সেটি। আঘাতের তীব্রতায় চারপাশ কেঁপে ওঠে, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া আর পোড়া জ্বালানির গন্ধ। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর উদ্ধার দল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় প্রশাসন বারবার মাইকিং করে জনসাধারণকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার অনুরোধ জানালেও অনেকেই তা উপেক্ষা করেন।
ঘটনাস্থলে প্রথম দিকেই পৌঁছান রহমান হোসেন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক। তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, ‘এ মুহূর্তে আশপাশের হাসপাতালগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন; কিন্তু মানুষজন হাসপাতালে না গিয়ে এখানে ভিড় করছেন, যার ফলে উদ্ধার কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
হ্যান্ডমাইক নিয়ে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক কাজী জাকারিয়া। তিনি বারবার অনুরোধ করছেন, ‘দয়া করে সবাই এক পাশে দাঁড়ান, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সকে জায়গা দিন।’ কিন্তু অনুরোধ বারবার করেও খুব একটা সাড়া মিলছে না। বরং অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ আর লাইভে ব্যস্ত।
এ ধরনের দায়িত্বহীন আচরণে হতাশ স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, মানুষ যদি এমন পরিস্থিতিতেও সচেতন না হয়, তবে বিপদে উদ্ধার কাজ চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনায় উৎসুক জনতার ভিড় শুধু উদ্ধারকার্য ব্যাহত করে না, বরং আরও প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি শাখার ক্যাম্পাসে সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ২০ জন নিহত ও অন্তত ১৭১ জন আহত হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে