স্ট্রোকে মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা: বেরোবি শিক্ষক কারাগারে
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘স্ট্রোকে মারা যাওয়া’ এক ব্যক্তির ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত ৩ জুন রংপুর নগরীর হাজিরহাট থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় তাঁকে ৫৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, গত বছরের ২ আগস্ট তাঁর স্বামী ছমেস উদ্দিনকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দেশি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন।
তবে ছমেস উদ্দিনের কবরের সাইনবোর্ড, চিকিৎসক ও স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি পুলিশের উপস্থিতি দেখে ভয়ে দৌড়ানোর সময় পড়ে গিয়ে স্ট্রোক করেন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।
মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার বাদীকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে পরে যাদের ইচ্ছা আসামি করা হয়েছে।
ছমেস উদ্দিনের ছেলে আশিকুর রহমানও বলেন, তার বাবা পুলিশ দেখে দৌড়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। তিনি নিজে ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। এলাকাবাসী ও স্থানীয় জামায়াত নেতা নাছির উদ্দিনও মৃত্যুর দিন তারিখ নিয়ে অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, মামলাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।
এ মামলায় স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউশা মোহন জানান, তাঁর বাবাকেও যুবলীগ নেতা হিসেবে দেখিয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছে, অথচ তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় আহত আন্দোলনকারী হিসেবে গেজেটভুক্ত। তিনি বলেন, এই মামলায় ওসি আবদুল আল মামুন শাহ’র আগ্রহ বেশি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজিরহাট থানার ওসি আবদুল আল মামুন শাহ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, যাচাই-বাছাই করে চার্জশিট দেওয়া হবে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা বানানো বা হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা থানায় গিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে