Views Bangladesh Logo

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ই দায়ী: তদন্ত কমিটি

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

ত জুলাই মাসে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় দলটি এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মী–সমর্থক উভয় পক্ষই দায়ী বলে বিচার বিভাগীয় তদন্তে উঠে এসেছে।

সরকার গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উসকানি, গুজব, দুই পক্ষের অনঢ় অবস্থান এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতা—সব মিলিয়ে এই সংঘাত ছিল ‘অবশ্যম্ভাবী’।

কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রতিবেদনে ৮-১০টি সুপারিশ ও ভবিষ্যতের জন্য পাঁচটি করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সংঘর্ষের কারণ
কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনসিপির সারাদেশব্যাপী কর্মসূচির নাম পরিবর্তন করে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ রাখার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়ে। স্থানীয়দের কাছে এটি উসকানিমূলক মনে হয়। সমাবেশের আগে ও সেদিন সকালে প্রশাসনের গাড়িতে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা ঘটনার পর সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনসিপির ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান স্থানীয়দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ভাঙা হতে পারে। মসজিদ থেকে ঘোষণার পর স্থানীয়রা রাস্তায় নেমে এনসিপি কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।

সাজ্জাদ সিদ্দিকীর ভাষায়, ‘গোপালগঞ্জবাসীর বিশেষ ধরনের ট্রাইবালিজম এবং পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী বাস্তবতা মেনে না নেয়া—দু’পক্ষের এই অবস্থান সংঘাতকে অনিবার্য করে তোলে।’

গোপালগঞ্জে ওই সংঘর্ষের আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের একটা ঘাটতি পেয়েছে তদন্ত কমিশন।

জড়িত কারা
কমিশন গণমাধ্যমের ছবি, ভিডিও ও সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, যাদের নাম এসেছে তাদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ‘দলীয় লোকজনের নেতৃত্বেই স্থানীয় লোকজন সমবেত হয়ে আক্রমণ করেছে,’ বলেন সিদ্দিকী।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ শেষ করে যাওয়ার পথে অবরুদ্ধ এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘যারা সেখানে সমাবেশ করতে গিয়েছিল তারা খুব তাড়াহুড়া করেছে বলে মনে হয়েছে।’

সুপারিশ ও করণীয়
কমিশন স্পর্শকাতর রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজনের পূর্বে অন্তত ১৫ দিন আগে অনুমতি নেয়ার সুপারিশ করেছে। রাজনৈতিক বক্তৃতায় শব্দ ও বাক্য নির্বাচনে সতর্কতা, উসকানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বডি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টিও সুপারিশে এসেছে।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘গোপালগঞ্জের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা একেবারেই দেখা গেছে একে অপরের প্রতি বিষোদগার থেকে। ফলে সংঘাতটা অবধারিত হয়ে গেছে।’

এছাড়া নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং দায়িত্বে পেশাদারিত্ব দেখানো কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গুলিতে নিহতের তদন্ত
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচ জন নিহত হন। তবে কীভাবে ও কার গুলিতে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন সে বিষয়টি কমিশন তদন্ত করেনি। কমিশনের টিওআর বা কার্যপরিধির মধ্যে গুলিতে মৃত্যুর তদন্ত ছিল না।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘কার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে, সেটা টেকনিক্যাল বিষয়। প্রয়োজনে সরকার ফরেনসিক বা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় আলাদাভাবে তদন্ত করতে পারে।’

গোপালগঞ্জের পুলিশ জানায়, গুলিতে নিহত পাঁচজনের মৃত্যুর কারণ ছিল ‘রক্তক্ষরণ ও শক, যা পূর্ববর্তী আঘাতের ফলে ঘটেছে’—এবং তা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃতির।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিবিসি বাংলাকে জানায়, গোপালগঞ্জের ঘটনায় জাতীয় পর্যায়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, ওই ঘটনায় সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছিল।

প্রতিবেদন প্রকাশ পায়নি
গত সেপ্টেম্বরের শেষে কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলেও সরকার তা এখনো প্রকাশ করেনি।
সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিবেদনে কোনো সেনসিটিভ বিষয় নেই। সরকারের স্বচ্ছতা ও জনআস্থা বৃদ্ধির জন্য এটি প্রকাশ করা উচিত।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ