Views Bangladesh Logo

নির্বাচনের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক প্রচারণা বাড়ছে: সিসিএএফ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে পড়া বাড়ছে, এমনটা জানিয়েছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএএফ)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই সাইবার সচেতনতা বাড়াতে হবে, না হলে প্রযুক্তিনির্ভর নানা ঝুঁকি বাড়বে।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস মান্থ অক্টোবর-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হয়। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

র‍্যাবের সাইবার সিকিউরিটি পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শফি উল্লাহ বলেন, ‘প্রযুক্তির কোনো সীমানা নেই। সারা পৃথিবীর মানুষ যেমন প্রতারণার শিকার হয়, আমরাও ঝুঁকির বাইরে নই। সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার এখন রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে, তাই সতর্কতাও বাড়াতে হবে।’

সিসিএএফের উপদেষ্টা সাইদ জাহিদ হোসেন জানান, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো অনেক ভুয়া তথ্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। অনেকেই ইচ্ছে করে প্রতিপক্ষের ক্ষতি করতে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়।’

ব্লাস্টের উপপরিচালক তাপসী রাবেয়া বলেন, ‘অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার শুধু গ্রামের কম শিক্ষিত মানুষ নয়, শহরের উচ্চ শিক্ষিতরাও।’ ‘ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৫–২৫ শতাংশ আইনগত সহায়তা নেন না, অনেক সময় সচেতনতার অভাবেই,’ জানান তিনি।

জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস কমিটির সম্পাদক মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান এখনো সীমিত। আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি তৈরি ও ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে। এখন এআই ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা পরিচয়পত্র বানিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যাচাই না করে এগুলো শেয়ার করা বিপজ্জনক।’

সিসিএএফের ২০২৪ সালের এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ সাইবার অপরাধের শিকার ১৮–৩০ বছর বয়সী, আর এর মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ নারী। অপরাধের ধরনে সবচেয়ে বেশি (২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং। এছাড়া ‘অন্যান্য’ অপরাধ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ভুক্তভোগীর সুনাম নষ্ট হয়েছে, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, আর প্রায় সবাই মানসিক চাপে ভুগেছেন। আইনি সহায়তা নিয়েছেন মাত্র ১২ শতাংশ। এর মধ্যে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি করেছেন, আর ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিক্ষিত—৪০ ল ৯ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক, ২১ দশমিক ২১ শতাংশ স্নাতক, ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক, আর ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিকের নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দশম সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস মান্থ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সাল থেকে সিসিএএফ অক্টোবর মাসে এ বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রচারণার সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। এ বছর তারা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্সের আন্তর্জাতিক অভিযানে যুক্ত হয়েছে।

সংস্থাটি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে, মজবুত পাসওয়ার্ড ব্যবহার, দুই ধাপের যাচাই (মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন), সফটওয়্যার আপডেট রাখা এবং সন্দেহজনক লিংক এড়িয়ে চলা—এই চারটি সহজ বিষয় না মানলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রও বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অক্টোবরজুড়ে এই চারটি বিষয়ে দেশজুড়ে সচেতনতা প্রচারণা চলবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ