লাঠিচার্জ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরিয়ে দিল পুলিশ, আন্দোলন চলবে
তিন দফা দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
তবে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মবিরতিও ঘোষণা করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ জোট।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জোটটির লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনকারী ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থান নিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল নয়টা থেকে শুরু বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ছুড়লে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী আহত হন। একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
দুপুর পৌনে দুইটার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে নেমে এলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই প্রথম দফায় বিক্ষোভকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। তারা কিছুক্ষণের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও পরে প্রেসক্লাবের সামনে ফের একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন।
পরে আন্দোলনকারীদের প্রেসক্লাব ছেড়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু তারা সড়ক ছেড়ে না গেলে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বিকেল তিনটার আন্দোলনকারীরা পিছু হটলে প্রেসক্লাব এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের অন্য একটি আন্দোলন চলছিল পাশেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভেবে পুলিশ সেখানেও লাঠিচার্জ করে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আন্দোলনকারী সেসব শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে সরকারের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান এবং এটিকে ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’ বলে অভিহিত করেন বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। মূল বেতনের ভিত্তিতে বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং উৎসব বোনাস মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবি দ্রুত পূরণেরও আহ্বান জানান তারা।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন সমিতির নেতারা। আন্দোলনরতদের ঐক্য বজায় রাখা ও যেকোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এড়ানোরও আহ্বান জানান তারা।
জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি পূরণে সরকার আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে লাগাতার ধর্মঘট ও এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’।
পরে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা ও সচিবের সাথে সাক্ষাত করতে সচিবালয়ে যান। তারা হলেন, জোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজি, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন হেলালী, হাবিবুল্লাহ রাজু ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, মো. আবু তালেব সোহাগ, আশরাফুজ্জামান হানিফ, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন, তোফায়েল সরকার, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার, আজিজুর রহমান আজম ও শান্ত ইসলাম।
দাবি আদায়ে এর আগে ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাবেশ, ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে শিক্ষক সম্মেলন করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ জোট।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে