জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া যায় না: সালাহউদ্দিন
রাষ্ট্র কোনো খেলনা নয়; জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত হওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক বিষয়বস্তুতে আলোচনার মধ্য দিয়ে সালাহউদ্দিন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যে কোনো আইনানুগ, বৈধ ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তনের কোনো অধিকার আমাদের নেই। যদি এ ধরনের প্রক্রিয়া অবৈধভাবে চালু হয়, তা ভবিষ্যতে বারবার সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জন্মাবে।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, রাষ্ট্র কোনো ছেলে খেলা নয়। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। এই রাষ্ট্রকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হতে হবে। রাজনৈতিক দলের কোনো অভিসন্ধির কাছে আমরা মাথা নত করতে পারি না। জনগণের স্বার্থ চূড়ান্ত, জনগণের অভিপ্রায় চূড়ান্ত। এই দেশের সার্বভৌম জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মালিক।
তিনি জুলাই সনদ ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনের দিনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণকে সনদের পক্ষে বা বিপক্ষে হ্যাঁ-না বলার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। যদি জনগণ হ্যাঁ বলে, নির্বাচিত সংসদের সদস্যরা আইনানুগভাবে সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য বাধ্য থাকবেন। সংবিধান কোনো ‘কচু পাতার পানি’ নয় যে, যা খুশি তাই পরিবর্তন করা যায়।
বাংলাদেশের জন্ম ও স্বাধীনতার ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন দেশে সংবিধান ছিল না, তখন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গণপরিষদ গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণা জারি করেছিলেন। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ চলেছে। পরে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হয়েছে এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ বার সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যতেও সংবিধান পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সাংবিধানিক ও আইনানুগ হবে।
সালাহউদ্দিন পিআর পদ্ধতি নিয়ে সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, পিআর মানে পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস—এটি রাষ্ট্রে স্থায়ী অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর নজির দেখা যায় নেপালসহ অন্যান্য দেশে। বাংলাদেশে আমরা এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চাই না, যেখানে সিম্পল মেজরিটির ভিত্তিতে সরকার গঠন সম্ভব হয় না।
তিনি যোগ করেন, যারা নিজেদের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করছে, তাদেরকে বলব—সঠিক পথে ফিরে আসুন। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এটি নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা এবং নির্বাচন বিলম্বিত করার হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
আলোচনা সভায় এনডিপির সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুন সভাপতিত্ব করেন, সঞ্চালনা করেন মহাসচিব জামিল আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণ দলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তরিকুল ইসলাম, ন্যাপের আবদুল বারেক এবং এনডিপির আওলাদ হোসেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে