Views Bangladesh Logo

হেভি মেটালের কিংবদন্তি ওজি অসবোর্ন আর নেই

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

ব্রিটিশ হেভি মেটালের কিংবদন্তি, ব্ল্যাক স্যাবাথের ফ্রন্টম্যান এবং বিশ্বখ্যাত গায়ক ওজি অসবোর্ন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

অসবোর্নের পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় ওজি অসবোর্ন আজ সকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। পরিবারের ভালোবাসার মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই সময়ে আমাদের গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি।'

১৯৪৮ সালে বার্মিংহামের আস্টনে জন্ম নেয়া জন মাইকেল “অজি” অসবোর্ন বেড়ে ওঠেন এক দরিদ্র শিল্প এলাকায়। শৈশবেই তাকে নানা নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়। যুবক বয়সে চুরি করার অভিযোগে জেলও খাটেন, পরে এক সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেন, ‘চুরি-ডাকাতির কাজ আমার একদমই ঠিকঠাক হতো না। একেবারে ব্যর্থ ছিলাম।’

ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বর ও গা শিউরে ওঠা পরিবেশনায় অজি হয়ে ওঠেন হেভি মেটালের পথপ্রদর্শক। ব্ল্যাক স্যাবাথ গড়ে তোলেন এমন একটি শব্দভাণ্ডার, যা তাদের সময়ের শিল্প বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ব্যান্ডটির বেজ গিটারিস্ট গিজার বাটলার বলেন, 'আমরা চাইছিলাম আমাদের সময়ের দুনিয়াকে যেভাবে দেখতাম, সেটা গানে তুলে ধরতে। আনন্দের পপ গান বানাতে চাইনি। বরং শিল্পাঞ্চলের সেই কঠিন পরিবেশের অনুভূতিই আমাদের গানে তুলে ধরেছি।'

তিনি আরও বলেলেন, “আমরা চারপাশের নিষ্ঠুর বাস্তবতাই তুলে ধরতে চেয়েছিলাম, খুশির পপ গান নয়।”

ব্ল্যাক সাবাথের সঙ্গে পাঁচটি সফল অ্যালবাম করার পর ১৯৭৯ সালে মাদকাসক্তির কারণে ব্যান্ড ছেড়ে দিলেও ২০১৩ সালে ফিরে আসেন ওজি অসবোর্ন। ফিরে আসার পর প্রকাশ করেন আলোচিত অ্যালবাম ‘13’। এরপর ব্যক্তিগত ও পেশাগত নানা ঝড় পেরিয়ে তিনি শুরু করেন এক সফল একক ক্যারিয়ার—‘ব্লিজার্ড অব ওজ’ থেকে ‘পেশেন্ট নাম্বার নাইন’ পর্যন্ত ১৩টি অ্যালবাম।

১৯৮২ সালে আইওয়ায় একটি কনসার্টে ভুল করে একটি জীবন্ত বাদুরের মাথা কামড়ে ফেলেন, যা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। এর এক বছর আগে একটি মিউজিক মিটিংয়ে দুইটি পায়রার মাথা ছিঁড়েছিলেন।

২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রচারিত রিয়েলিটি শো ‘দ্য অসবোর্নস’ -এ পুরো পরিবার অংশ নেন। অসবোর্নের মুগ্ধ করা সরলতা ও বেফাঁস কথাবার্তা তাকে নতুন করে জনপ্রিয় করে তোলে।

এই মাসের শুরুতে (৫ জুলাই) ‘ব্যাক টু দ্য বিগিনিং’ নামে একটি বিদায়ী কনসার্টে আবারও একত্রিত হন ব্ল্যাক স্যাবাথের মূল সদস্যরা। হুইল চেয়ার সদৃশ বাদুড় আকৃতির সিংহাসনে বসে শ্রোতাদের উদ্দেশে ওজি বলেন, ‘আই অ্যাম আয়রন ম্যান (আমি লৌহ মানব), পাগল হয়ে যাও!’

এই কনসার্টে পারফরম্যান্স করে মেটালিকা, স্লেয়ার ও গানস এন' রোজেসের মতো কিংবদন্তি ব্যান্ড।

পারকিনসন রোগ, সার্জারি, ও পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে গেলেও শারীরিক দুর্বলতা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। চলতি বছরের মে মাসে দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওজি অসবোর্ন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারি, শরীরের আরও কিছু খারাপ হয়েছে। মনে হতো, এর আর কোনো শেষ নেই।' স্ত্রী শ্যারন তখন বলতেন, ‘তোমার সকালে ঘুম থেকে ওঠার একটা কারণ দরকার।’

২০০৩ সালে মেয়ে কেলির সঙ্গে গাওয়া ‘চেইঞ্জেস’ গানটির জন্য প্রথমবার চার্টের শীর্ষে ওঠেন ওজি। শ্যারনের উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে 'ওজফেস্ট' নামের মেটাল উৎসব শুরু হয়।

ওজির বিতর্কিত ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল সংযম, পুনরায় সম্পর্ক ও বিচ্ছেদ।

অসবোর্নের মৃত্যুতে রক কিংবদন্তি এলটন জন বলেন, ‘তিনি ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু ও রক সংগীতের পথপ্রদর্শক। সত্যিকারের এক কিংবদন্তি। একইসঙ্গে জীবনে দেখা সবচেয়ে হাস্যরসিক একজন মানুষ। তাকে ভীষণ মিস করব।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ