Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশে প্রতি চারটি পরিবারের একটি দারিদ্র্যসীমার নিচে: জরিপ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি চারটি পরিবারের একটি (২৭.৯৩ শতাংশ) উচ্চ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, আর প্রায় ১০টি পরিবারের মধ্যে একটি নিম্ন দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে।

সোমবার প্রকাশিত জরিপে দেখা, প্রায় ৯ শতাংশ দরিদ্রতম পরিবার জানিয়েছে, তারা পুরো একদিন খাবার ছাড়া কাটিয়েছে এবং অর্ধেকেরও বেশি পরিবার দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছে।

দেশব্যাপী ৮ হাজারের বেশি পরিবারকে নিয়ে করা এই জরিপে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানহীনতা এখনও প্রকট, যেখানে ৩৮ শতাংশ শ্রমিক পর্যাপ্ত কাজ জোগাড় করতে পারছেন না। নারীরা কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তাদের অংশগ্রহণের হার ২৬ শতাংশে আটকে আছে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা এখন উল্টে গেছে। পিপিআরসির মতে, এখন মাথাপিছু মাসিক নিম্ন দারিদ্র্যসীমা ৩ হাজার ১১৫ টাকা এবং উচ্চ দারিদ্র্যসীমা ৪ হাজার ৩৩৩ টাকা। বর্তমানে ৯.৩৫ শতাংশ মানুষ নিম্ন দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ২৭.৯৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫.৬ শতাংশ এবং ১৮.৭ শতাংশ।

বৈষম্য বৃদ্ধি ও আয়-ব্যয়ের পার্থক্য
জরিপে দেখা গেছে, দেশে বৈষম্যও অনেক বেড়েছে। জাতীয় গিনি সহগ (যা বৈষম্যের পরিমাপক) ২০২২ সালের ০.৩৩৪ থেকে বেড়ে এখন ০.৪৩৬-এ দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য কিছুটা কম হলেও শহরাঞ্চলে তা অনেক বেশি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অসম পুনরুদ্ধার, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রকৃত আয় কমে যাওয়াই এই বৈষম্য বৃদ্ধির মূল কারণ।

জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা। তবে গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারের মধ্যে আয়ের বড় পার্থক্য রয়েছে; গ্রামীণ পরিবারগুলো মাসে প্রায় ২৯ হাজার ২০৫ টাকা আয় করে, যেখানে শহুরে পরিবারের আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা। খরচের ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। গ্রামীণ পরিবারগুলোর গড় মাসিক ব্যয় ২৭ হাজার ১৬২ টাকা, আর শহুরে পরিবারগুলোর ব্যয় ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা।

সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় মাত্র ৮ হাজার ৪৬৭ টাকা, কিন্তু তাদের খরচ ১২ হাজার ২৯৪ টাকা। ফলে তারা প্রায়শই ঋণ বা বাইরের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক আয় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৯০ টাকা এবং ব্যয় ১ লাখ ১ হাজার ১৬৩ টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় ও ব্যয় প্রায় সমান, ২৯ হাজার ২৭৭ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় ২৯ হাজার ৮২৬ টাকা।

আশার আলো ও নীতিগত সুপারিশ
জরিপে কিছু ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে। যেমন, ৭৪ শতাংশ পরিবার স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং ১৫ শতাংশ পরিবার রেমিট্যান্স থেকে উপকৃত হয়। তবে এই আশাবাদ ধনী ও গরিবের মধ্যে সমান নয়; ধনী পরিবারগুলোর ৬২ শতাংশ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী, সেখানে গরিবদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আশাবাদী।

পিপিআরসি নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জরুরি পারিবারিক সহায়তা, শিক্ষা অনুদান এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য বাস্তব সময়ের ডেটা পর্যবেক্ষণ, আঞ্চলিক বৈষম্য মোকাবিলা এবং সমতার ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ