প্রতি চার শিশুর একজনের রক্তে সিসা, ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিতে: জরিপ
দেশজুড়ে শিশুশ্রম বেড়েছে, ফলে অতিরিক্ত আরও ১২ লাখ শিশু ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। একই সময়ে, ১২–৫৯ মাস বয়সী প্রায় প্রতি চার শিশুর একজনের রক্তে অতিরিক্ত সিসা পাওয়া গেছে, যা সরাসরি মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) যৌথ জরিপ এমআইসিএস ২০২৫-এর প্রাথমিক ফলাফল দেশে শিশুদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বড় ধরনের সতর্ক বার্তা দিচ্ছে।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার একটি অডিটোরিয়ামে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন। ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর পরিচালিত এই জরিপে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন, শিশুশ্রম ও সহিংসতা সম্পর্কিত কঠোর বাস্তবতা উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ১২–৫৯ মাস বয়সী ৩৮ শতাংশ শিশুর রক্তে নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি সিসা রয়েছে। ঢাকায় এই হার সর্বোচ্চ, ৬৫ শতাংশ। সমস্যাটি ধনীর ঘরেও কম নয়; দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের প্রায় অর্ধেক তুলনামূলকভাবে সচ্ছল পরিবারের। গর্ভবতী নারীদেরও ৮ শতাংশের রক্তে অতিরিক্ত সিসা পাওয়া গেছে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “যদিও শিশুমৃত্যু ও বাল্যবিবাহের হার কমেছে, সিসা দূষণ ও শিশুশ্রম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকা, শেখা ও বড় হওয়ার অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয়।”
২০১৯ সালের তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার বেড়ে ১২.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মাতৃ রক্তস্বল্পতা রয়েছে ৫২ শতাংশেরও বেশি। কিশোরী মাতৃত্বের হারও বাড়ছে। জরিপে সতর্ক করা হয়েছে যে, মাতৃ ও শিশু পুষ্টিতে পুনরায় বিনিয়োগ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ৫–১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রম বেড়ে ৯.২ শতাংশে পৌঁছেছে, ফলে আরও ১২ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৮৬ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী মাত্র ৫৯ শতাংশ শিশু নিবন্ধিত এবং মাত্র ৪৭ শতাংশের জন্ম সনদ রয়েছে, ফলে অনেক শিশু আইনগত পরিচয় ও সরকারি সেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছে।
জরিপ তথ্য অনুযায়ী, নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে ২২, যা মোট শিশুমৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশ। সিজারিয়ান অপারেশনের হার বেড়ে ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং মাত্র ৪৬ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থার প্রথম চার মাসে স্বাস্থ্যসেবা পান— যা ইউনিসেফের মতে একটি বড় মাতৃস্বাস্থ্য ঘাটতি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে