প্রথম পর্ব
রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে লাইসেন্স নেয়া মানেই সাংবাদিকতা করার সুযোগ বন্ধ করা
বহুবিধ ও বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যুগোপযোগী, কার্যকর সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যাতে গণমাধ্যমের মালিকানা, আয়ব্যয়, বিজ্ঞাপন বাজার, আর্থিক নিরাপত্তা, বিটিভি-বেতার-বাসস সম্পর্কে করণীয়, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ করেছেন কামাল আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন। এই ২০ দফার অধীনে রয়েছে আরও বেশ কিছু উপ দফা। যাতে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলো কার্যকরে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ: ২০২৫’-এর খসড়াও পেশ করেছে কমিশন। এই খসড়া অধ্যাদেশ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন খুব দ্রুত এই কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আইনি ভিত্তি পাবে। এই কমিশন গঠন, কার্যক্রম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজ। সেই সাক্ষাৎকার ভিউজ বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। পাঁচ পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব:
ভিউজ বাংলাদেশ: অনেক বড় একটা দায়িত্ব আপনি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। শুরুতে জানতে চাই, আপনার এই যাত্রাটা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
কামাল আহমেদ: সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা জানতে চেয়েছিল, আমি এই কমিশনের দায়িত্ব নিতে রাজি আছি কি না? আমি সম্মতি দিয়েছি এবং দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেয়ার পর কমিশনের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আমার মতামত চাওয়া হয়েছিল। প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে, কাদের নিলে ভালো হয়। আমি সেখানে পরিষ্কার বলেছিলাম, আমরা যদি মিনিংফুলভাবে কোনো সংস্কার করতে চাই তাহলে কমিশনে অংশীজনদের অংশগ্রহণ দরকার হবে। সেজন্য অংশীজনদের প্রতিনিধি থাকা দরকার। তাহলে কমিশনটা প্রতিনিধিত্বশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। সেখানে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যে সুপারিশটা তৈরি করা যাবে সেটা বাস্তবায়নও সহজ হবে। তাদের বলা যাবে, এই কমিশনের সুপারিশ তৈরি করতে আপনারাই যেহেতু অবদান রেখেছেন, ভূমিকা রেখেছেন সুতরাং এটা বাস্তবায়নও আপনাদেরই দায়িত্ব। সেটার ভিত্তিতেই কমিশনটা গঠিত হলো এবং তারপর আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করেছি।
ভিউজ বাংলাদেশ: এই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটা যখন আপনারা করতে গিয়েছেন বা কাজ করেছেন, তখন কি বড় কোনো সমস্যায় আপনারা পড়েছিলেন?
কামাল আহমেদ: খুব বড় ধরনের কোনো সমস্যায় আমরা পড়িনি। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে ক্ষমতা আর সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, আমি বলব সেটা পর্যাপ্ত ছিল। তাদের নিঃসন্দেহে প্রশংসা করতে হয় যে, তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেননি। কোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি। কোনো ধরনের নির্দেশনা দিয়ে ‘আমরা এটা চাই, এটা করে দেন’ এমন কিছু কেউ করেননি। বরং প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকার নির্দেশনা দিয়েছে, সব জায়গায় সব ধরনের সুবিধা কমিশনকে দিতে হবে। আমরা কমিশনের তরফ থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের নথিপত্র চেয়েছি। সেই নথিপত্র প্রকাশের জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। আমরা যখন যা চেয়েছি, সব নথিপত্রই আমাদের দেয়া হয়েছে। সেদিক থেকে আমি বলব, আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই ইতিবাচক।
ভিউজ বাংলাদেশ: অন্য কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা...
কামাল আহমেদ: বাধার দিক থেকে যদি বলেন, বাধা একটি ছিল। সেটা হলো, অংশীজনদের একটি অংশের সঙ্গে আমরা সরাসরি কোনো কথা বলতে পারিনি। এটার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের সাংবাদিকদের মধ্যে কিছু অংশ এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কিছু অংশ- আমাদের তারা ভুল বুঝেছেন। আমরা যখন টেলিভিশন মালিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম তাদের মতামত শোনার জন্য। তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু প্রশ্নের জবাবও নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কারণ তাদের লাইসেন্সিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তারা যেভাবে টেলিভিশন পরিচালনা করেছে, সেগুলো নিয়ে। তাদের প্রতি মানুষের মনে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা কী? - এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে তাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম, বিষয়টা খুবই জরুরি। আর সেটা জানতে পারলে আমাদের এই রিপোর্টটা সমৃদ্ধ হবে এবং মানুষেরও অনেক ধারণা স্পষ্ট হবে- এমনটা আমরা ভেবেছিলাম। তখন এক পক্ষ থেকে বলা হলো, এরা ফ্যাসিবাদের দোসর। আর ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে কমিশন। আমরা বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সেই সভা বাতিল করি। কারণ পরে যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেটার দায়িত্ব নেয়া আমাদের পক্ষে সমীচীন হতো না। এমনিতেই দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটু অস্থিরতার মধ্যে আছে। অস্পষ্টতার মধ্যে আছে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব চারদিকে। সে কারণে আমরা ঝামেলা বাড়াতে চাইনি। ফলে যেটা হলো, আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারলাম না। তারপর তাদের যে একটা সংগঠন আছে অ্যাটকো (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভেশন চ্যানেল ওনার্স)। তারা লিখিতভাবে একটা বক্তব্য দিয়েছে। তাদের সুপারিশগুলো দিয়েছে, তারা কী চান। আমরা কিন্তু এসব প্রতিবেদনে যুক্ত করে দিয়েছি। ওয়েবসাইটে সব আছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: তাদের সুপারিশগুলো কেমন ছিল। কোন কোন বিষয় ছিল?
কামাল আহমেদ: সুপারিশগুলোর মধ্যে তারা একটা জায়গায় বলেছে সিন্ডিকেট এবং অশুভ চক্রের, ফ্যাসিস্টদের সহায়ক চক্রের হস্তক্ষেপ বা প্রভাবের কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। এটা ইতিবাচক যে তারা স্বীকার করে এখানে সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে। এখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয় আছে; কিন্তু তারা যে সক্রিয়ভাবে এই কাজগুলো এর আগে করে এসেছে, সেটার ব্যাখ্যা কী? তারা তাদের আবেদনপত্রে লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের রাজনৈতিক আদর্শ, রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করার জন্য টেলিভিশন লাইসেন্স চাচ্ছেন। সেটার ব্যাখ্যা কী? কারণ আপনি যখন সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে লাইসেন্স নিচ্ছেন তখনতো আর আপনি সাংবাদিকতা করার কোনো সুযোগ রাখছেন না এবং সে অবকাশ কোথাও থাকে না। এ প্রশ্নগুলো করার আমরা কোনো সুযোগ পাইনি। এটাই হলো আমাদের নেতিবাচক দিক বা বাধার দিক।
ভিউজ বাংলাদেশ: সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আছে বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৩টা টেলিভিশন লাইসেন্স নিয়েছে। যার মধ্যে ৪০টা অনএয়ারে আছে। তারা যখন আবেদন করেছেন তখন কি ওই কথাগুলো লেখা ছিল?
কামাল আহমেদ: হ্যাঁ। আমরা সেগুলো উদ্ধৃতি আকারে বলেছি। স্মৃতি থেকে আমি দুটো চ্যানেলের কথা এখনই বলতে পারি। একটা হলো ইসমত কাদির গামার চ্যানেলের আবেদনে পরিষ্কার বলা হয়েছে, আমি আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী। আমি দলের আদর্শ এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি, সেগুলোকে তুলে ধরার জন্য টেলিভিশন লাইসেন্স চাই। একই ধরনের কথা আছে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এশিয়ান টিভির হারুনুর রশীদের আবেদনপত্রে। উনি আওয়ামী লীগের নেতা। উনার টেলিভিশনের আবেদনপত্রে একই ধরনের কথা লেখা আছে। আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে, আমাদের টেলিভিশন খাতের প্রথম জেনারেশনের টেলিভিশনগুলোও তাদের আবেদনপত্রেও সরকারের উন্নয়নখাতের পুনঃপ্রচারের অঙ্গীকার আছে। যেমন; এটিএন বাংলা।
ভিউজ বাংলাদেশ: তার মানে বেসরকারি টেলিভিশনে এমন ধরনের অঙ্গীকার আওয়ামী লীগের আগেও ছিল?
কামাল আহমেদ: হ্যাঁ। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে লাইসেন্সগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলোতেও এসব আছে। চ্যানেল আই- তাদের আবেদনপত্রেও লেখা আছে, তারা সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে তুলে ধরবে। এমনকি বাংলাদেশ টেলিভিশন যে জাতীয় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করে এবং যে ধরনের তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে সেগুলো তারা পুনঃপ্রচার করবে। তাদের আবেদনেও এই অঙ্গীকার আছে। তাহলে আপনি তাদের কাছে ব্যতিক্রমী জিনিস কীভাবে আশা করবেন? বা তারা ব্যতিক্রমী কোনো কিছু করতে আগ্রহী হবে কেন? কারণ অঙ্গীকারতো আছে বিটিভিতে যা হচ্ছে, প্রায় একই জিনিস করবে বা পুনঃপ্রচার করবে। দেখুন, বেতার, টেলিভিশন, রেডিও- এগুলো হলো সৃজনশীল মাধ্যম। এখানে সৃজনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ক্রিটিক্যাল থিংকিং, ভিন্নভাবে দেখতে পারা, প্রশ্ন করতে পারা- এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর সুযোটা তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন তাদের লাইসেন্সের আবেদন বা অঙ্গীকারে। এটা খুবই হতাশাজনক।
ভিউজ বাংলাদেশ: আমি ৭-৮ বছর সাংবাদিকতা করেছি। আমি যতদূর জানি, নিউজরুম বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় কিছু গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব বা যোগাযোগ বা হস্তক্ষেপ থাকে বা ছিল। সেই বিষয়টা কী আপনারা অনুসন্ধান করেছিলেন?
কামাল আহমেদ: আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। আমরা কোনো গোয়েন্দা সংস্থাকে ডাকিনি। ডাকব কি ডাকব না- সেটা নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে তাদের ডাকা হবে না। কারণ তাদের ডাকলে তাদের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হয়। অংশীজন হিসেবে মেনে নেয়া হয়। স্বীকার করা হয় গণমাধ্যমে তাদের স্টেক আছে। সে কারণে তাদের মতামতকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি বা ডেকে আনছি আনুষ্ঠানিকভাবে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা আর ওটা করিনি। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের ডাকিনি; কিন্তু তাদের হস্তক্ষেপ, অংশগ্রহণ- এগুলোর নানা রকম প্রমাণ, নানা রকম নজির আমাদের কাছে এসেছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: দুই-একটা আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন?
কামাল আহমেদ: সংস্কার কমিশনের কাজে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার সাংবাদিক, প্রকাশক, সম্পাদকের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। এই সভায় সুর্নিদিষ্টভাবে (স্পেসিফিক) অনেক দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে। ২০১৮ সালে একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার পক্ষ থেকে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল আমরা টাকা দিচ্ছি, আপনি একটি দৈনিক পত্রিকার ডিক্লারেশন নিন এবং পত্রিকা বের করুন। সেই সাংবাদিক সেই টাকা নিয়েছেন, ডিক্লারেশন নিয়ে সেই সংবাদপত্র বের করেছেন। পত্রিকার কয়েক সংখ্যা বের করার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন, এটা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার (যারা টাকা দিয়েছেন) আর কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং তিনি পত্রিকা আর চালিয়ে যাননি; কিন্তু পরে তিনি আবিষ্কার করেছেন, তার ওই পত্রিকার টাইটেলের নামে একটা অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়েছে এবং সেই অনলাইন পোর্টাল ওই গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিত ব্যবহার করছে বক্তব্য প্রচার-প্রচারণার জন্য। এটা একটা অদ্ভুত কাণ্ড। এরকম আমরা আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনেছি, তারা গণমাধ্যমের লোকজনকে টাকা দিয়েছে বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা, নাকি অন্য কোনো উৎসের টাকা, সেইটা আমরা জানি না।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশেষ করে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের যে একটা অভিযোগ, এই অভিযোগ গুরুতর। এই অভিযোগ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালের পরেও ২০১০ বা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন- জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন, এটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তারা ওই এজেন্সিগুলোর হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছিলেন, নির্যাতিতও হয়েছিলেন। দুঃখজনক হচ্ছে, সেই অভিযোগ সরকার আমলে নেয়নি। গায়ে মাখেনি, গুরুত্ব দেয়নি। সেটা বন্ধ করার কোনো চেষ্টাও করেনি, তদন্তও করেনি। বরং ওই সমস্ত এজেন্সিকে সরকারের তরফ থেকে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ ও গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য। যতক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রে এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপে এই সমস্ত সংস্থাকে ব্যবহার করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি গণমাধ্যমেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। গণমাধ্যমেও তাদের হস্তক্ষেপ থাকবে। সেই আশঙ্কা দূর করার কোনো উপায় নেই।
(চলবে)
সাক্ষাৎকার গ্রহীতা রাহাত মিনহাজ: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে