উন্নয়ন সহযোগীদের আপত্তিকর শর্ত প্রত্যাখ্যান করতে হবে
বিগত সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল। বাংলাদেশ মূল ঋণ আবেদনের ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চাইলেও সংস্থাটি ২০ কোটি মার্কিন ডলার বেশি ঋণ মঞ্জুর করে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল আইএমএফের ঋণ অনুমোদন পরবর্তীকালে মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে আলোচনাকালে বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেভাবে চেয়েছে আইএমএফ ঠিক সেভাবেই ঋণ অনুমোদন করেছে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বাস্তবতা নিয়ে তখনই কোনো কোনো মহল থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। অনেকেই এমন মন্তব্য করেছিলেন, অর্থমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলেছেন। কারণ আইএমএফ কখনোই শর্তমুক্ত ঋণ অনুমোদন করে না।
আর বাংলাদেশ নিশ্চয়ই শর্তযুক্ত ঋণের জন্য আবেদন করেনি। আইএমএফের ঋণ চুক্তির প্রকাশ্য এবং গোপনীয় শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিককরণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসাবায়ন গ্রস পদ্ধতির পরিবর্তে নিট পদ্ধতিতে করা, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তুলনামূলক শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ ইত্যাদি সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল; কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে সংস্কার কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হলেও পরিত্যক্ত হয়নি। বর্তমান সরকারও আইএমএফের নির্দেশিত সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মাঝে মাঝেই আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। উল্লেখ্য, আইএমএফ এমন একটি সংস্থা যারা কোনো দেশকে শর্তমুক্তভাবে ঋণদান করে না। ঋণের শর্ত দেশভেদে ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু কোনো দেশই শর্তহীনভাবে আইএমএফের ঋণ পেয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে। তাই সাবেক অর্থমন্ত্রী যখন বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেভাবে চেয়েছে আইএমএফ ঠিক সেভাবেই ঋণ অনুমোদন করেছে। তার এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
অনুমোদিত ঋণের অর্থ তিন বছরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণের কথা। ঋণের আর মাত্র দুটি কিস্তি ছাড়করণ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে আইএমএফ এমন একটি শর্ত দিয়েছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এই শর্ত পরিপালন করা হলে তা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর হবে। বাংলাদেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়বে। ইতোপূর্বে আর কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এমন ধরনের শর্তারোপ করেনি। ফলে আরোপিত শর্তটি নজিরবিহীন বটে।
সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৮৪৪ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। আইএমএফ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণের সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, ছয় মাস শেষে ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, নয় মাস শেষে ৪৩৪ কোটি মার্কিন ডলার এবং পুরো অর্থবছরে মোট ৮৪৪ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। সংস্থাটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত মূল ঋণ চুক্তিতে এ ধরনের কোনো শর্ত ছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই। আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ যখন ২০২৩ সালে ঋণ গ্রহণ করে তখন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় হয়তো ঋণ গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল তাই বাংলাদেশ ঋণের জন্য আবেদন করেছিল। তার আগে অন্তত ১০ থেকে ১২ বছর বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। ফলে তাদের চাপিয়ে দেয়া কোনো শর্ত পরিপালনের আবশ্যকতা আমাদের ছিল না; কিন্তু আইএমএফ যেভাবে অনুমোদিত ঋণ ছাড়করণ করে তা বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় খুব একটা অবদান রাখতে পারেনি।
তাই প্রথম থেকেই স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এ ধরনের ঋণ গ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন; কিন্তু সেই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এছাড়া সরকারের গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন ছিল। তাই আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল। বিগত সরকার আমলে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত বৈদেশিক ঋণের মোট স্থিতি ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গেছে। বাংলাদেশ কার্যত বৈদেশিক ঋণনির্ভর একটি দেশে পরিণত হয়েছে। আর কয়েক বছর পর বাংলাদেশকে নতুন করে ঋণ গ্রহণপূর্বক আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। আইএমএফ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে তা অত্যন্ত অমর্যাদাকর। তাই এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। আইএমএফ এমনই এক আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা কেন দেশকে শর্তমুক্ত ঋণদান করে না। এই শর্ত অবশ্য দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে ঋণ চুক্তির শর্ত তুলনামূলক কঠিন হয়ে থাকে। বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা খারাপ কিছু নয়, যদিও সেই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই এবং ত্বরান্বিত করা যায়; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে।
বিগত সরকার আমলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঢালাওভাবে ঋণ গ্রহণ করে তার একটি বড় অংশই লোপাট করা হয়েছে। ফলে বিদেশি ঋণ গ্রহণ করে উন্নয়ন যতটা না ত্বরান্বিত হয়েছে তার চেয়ে দেশ আরও বেশি মাত্রায় বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। গত সরকার আমলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের গৃহীত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯২ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য স্থানীয় মুদ্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশ সুদাসল মিলিয়ে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে মোট ৪০৯ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। গৃহীত বৈদেশিক ঋণ ম্যাচিউরড হওয়ার কারণে প্রতি বছরই কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ সুদসমেত বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছিল ১২৯ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ যদি আগামীতে আর কোনো বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ না করে তাহলেও ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ৫১৫ কোটি মার্কিন ডলার কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ইতোপূর্বে গৃহীত ঋণের সুদ এবং আসল বাবদ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক স্থাপন করা হয়। বিশ্বব্যাংক ঋণদানের ক্ষেত্রে যেসব শর্তারোপ করে তা কিছুটা হলেও সহনীয় কিন্তু আইএমএফের শর্ত অধিকাংশ দেশের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক মূলত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দোসর হিসেবে কাজ করে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের মূল লক্ষ্য নয়। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে এমন দেশের সংখ্যা খুবই কম।
আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের যে সীমা নির্ধারণ করেছে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, ঋণ কোনো অনুদান বা করুণা নয়। ঋণ একটি দেশের অধিকার। কারণ গৃহীত ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে সুদ প্রদানসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। একটি দেশ কত পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করবে এবং তা কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেশটির থাকা উচিত।
সামরিক সরকার এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত; কিন্তু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে গণবিরোধী ও স্বৈরাচারী স্বভাবের সরকার তাদের একটি প্রবণতা হচ্ছে তারা রাস্তাঘাট তৈরিসহ এমন সব অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজে আত্মনিয়োগ করে যা সাধারণভাবে দৃশ্যমান এবং জনতুষ্টিমূলক। এসব কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করলেও সাধারণ মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ হয় না। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সরকার আমলে আমরা সেই বিষয়টিই প্রত্যক্ষ করেছি। উন্নয়নের বিভাজন করলে দেখা যাবে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আমলে এই অঞ্চলে তিনটি সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে অবকাঠামোগত খাতে। তার মধ্যে পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে আউয়ুব খানের আমলে এই অঞ্চলে যে বিস্তর অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সম্পাদিত হয়েছে তার উদাহরণ এখনো দৃশ্যমান।
পরবর্তীতে এরশাদ আমলে ৯ বছর বাংলাদেশে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। অবকাঠামোগত খাতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দর্শন ছিল, ‘অতি উন্নয়ন, অতি দুর্নীতি।’ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিগত সরকার আমলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়ন সংগ্রহের হার কমেছে। আগে যেখানে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ছিল ১০ শতাংশের উপরে এখন তা ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিওর বিবেচনায় বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দেশ। বাংলাদেশ একমাত্র শ্রীলঙ্কার উপরে অবস্থান করছে। শ্রীলঙ্কার আগেকার সরকার অপ্রয়োজনে এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে যা জাতীয় স্বার্থে কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিবেচনাহীনভাবে ঋণ গ্রহণের কারণে কয়েক বছর আগে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিকভাবে ঋণখেলাপি দেশে পরিণত হয়।
বাংলাদেশেও এমন সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় তেমন গুরুত্ববাহী নয়। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঢালাওভাবে ঋণ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এখনো শ্রীলঙ্কার মতো আন্তর্জাতিকভাবে ঋণখেলাপি দেশে পরিণত হয়নি ঠিকই; কিন্তু আগামীতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা বলা মুষ্কিল। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি প্রথমবারের ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে গেছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে বৈদেশিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৪ কোটি মার্কিন ডলার যা স্থানীয় মুদ্রায় ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
জনগণের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ গ্রহণ করে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে। ভারতে এক কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণে খরচ হয় ১৪ লাখ মার্কিন ডলার, পাকিস্তানে ২৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, ফিলিপাইনে ১১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, চীনে ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশে একই মাত্রার ফোর লেন রাস্তা নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ৬৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। উচ্চ ব্যয়ে নির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে জাতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল পাচ্ছে না; কিন্তু ঢালাওভাবে ঋণ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ ক্রমশ ঋণনির্ভর একটি দেশে পরিণত হতে চলেছে। আগে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে প্রতি বছরই বর্ধিত হারে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ কিস্তি হিসেবে ১২৯ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে বিদেশি ঋণের কিস্তি বাবদ বাংলাদেশকে ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। আগামীতে যদি আর কোনো বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা না হয় তাহলেও ২০২৯-৩০ অর্থবছরে বাংলাদেশকে ৫১৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে কিস্তি পরিশোধ বাবদ।
তাই আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সংস্থাটির সঙ্গে সম্পাদিত ঋণচুক্তি বাতিল করা যেতে পারে। দেশের মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ কাম্য হতে পারে না।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে