সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই বাস্তবায়নের জন্য করা হয়নি। কিছু বিষয় এই সরকার বাস্তবায়ন করছে, কিছু বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর হবে। আর বাকি সুপারিশগুলো ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনা করবে, তাদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে থাকবে। সব সংস্কার এই সরকারের সময়েই বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কমিশন গঠিত হয়নি।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত “দ্য স্টেট রিফর্মস অ্যান্ড ইলেকশন ডিসকোর্স ইন ট্রানজিশনাল ডেমোক্রেসিস: ফ্রম মাস আপরাইজিং টু ইলেকশন অ্যান্ড স্টেট বিল্ডিং” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী ‘ফার্স্ট পলিটিক্যাল সায়েন্স কনফারেন্স’-এর কী-নোট স্পিচ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী সেশন ও কী-নোট সেশন পরিচালনা করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
কী-নোট স্পিচে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, স্বৈরশাসকরা ভিন্নমত ও বিরোধীদল দমন করে শাসন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ভিন্নমত প্রকাশ শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রে তা অস্থিরতা তৈরি করে, যাকে বলা হয় ‘অটোক্রেটিক নস্টালজিয়া’। এই সময় দুটি প্রতিষ্ঠান — বিচার বিভাগ ও সামরিক-নিরাপত্তা বাহিনী — নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে এ প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কাও তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, যেসব সরকার ক্ষমতা হারায়, তাদের কিছু সমর্থক ইচ্ছাকৃতভাবে গণতান্ত্রিক রূপান্তর বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। যদি সরকার এ বিষয়ে সত্য তথ্য উপস্থাপন ও সদিচ্ছার পরিচয় দিতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ দেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ব্যর্থ এবং ৪০ শতাংশ দেশ সফল হয়েছে।
কনফারেন্স উদ্বোধনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছে। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্ক ও নেটওয়ার্ক জোরদারে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, “রাষ্ট্র যখন ট্রানজিশনাল পর্যায়ে থাকে, তখন শক্তিশালী ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান গঠনের সুযোগ তৈরি হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক নাছিমা খাতুনও বক্তব্য দেন।
কনফারেন্স আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসহ শিক্ষক-গবেষক-শিক্ষার্থীরা এ সম্মেলনে তাঁদের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন। এগুলো বর্তমান রাষ্ট্রসংস্কার ও নির্বাচন ঘিরে যে সংকট, তার উত্তরণের পথ দেখাবে।
কনফারেন্সের প্রথম দিন দশটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচক ও চেয়ার হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে