মব নয়, প্রেশার গ্রুপ তৈরি হয়েছে: শফিকুল আলম
গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গণমাধ্যমের সামনে যে মব তৈরি হয়েছিল, সেটিকে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তার মতে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই এই প্রেশার গ্রুপ গঠন করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও আইনি কাঠামো বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আইন বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুলসহ ১৬ জন আলোচকের বক্তব্যের পর বক্তব্য রাখেন প্রেস সচিব। কয়েকজন আলোচক মব নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানালে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “আপনি যেটাকে মব বলছেন, সেটা তো তৈরি হচ্ছে। আমি ওটাকে মব বলছি না, বলছি প্রেশার গ্রুপ। এটা গড়ে উঠেছে অতীতের জার্নালিজমের ব্যর্থতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিক্রিয়ায়। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে যারা কোনো ন্যূনতম সিভিল লিবার্টি পাননি, তারাই এই প্রেশার তৈরি করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের শীর্ষ সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে কঠোর দমন-পীড়নের দাবিও তুলেছিলেন। সে প্রেক্ষাপট থেকেই এসব গ্রুপ নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে।”
সেমিনারে ইরাবতী-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. মুক্তাদির রশীদ প্রশ্ন রাখেন, মবকে প্রেশার গ্রুপ বলা কি সরকারের অবস্থান?
জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “এটা সরকারের অবস্থান নয়। আমি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি। যারা পূর্ববর্তী সময়ের শাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই এখন নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন।”
এ সময় মুক্তাদির রশীদ প্রশ্ন করেন, প্রেস সচিবের এই মতামতের ভিত্তি কী? কোনো গবেষণা না হোজমিক্যালি (আবেগ নির্ভর) মতামত? উত্তরে শফিকুল আলম বলেন,
“আমি দুঃখিত, এ বিষয়ে আর কিছু বলব না।”
মব এবং গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “গণমাধ্যমের ব্যর্থতায় জনগণের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়েছে। কেউ এখন দায়িত্ব নিচ্ছে না। অনেকেই মনে করছে নতুন সরকার এসেছে, পুরোনোদের সরিয়ে দিয়ে আবার আগের মতো গুছিয়ে নেয়া যাবে। এতে সাংবাদিকতার প্রকৃত উত্তরণ হবে না।”
তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশে সাংবাদিকতার যে স্বাধীনতা আছে, উন্নত বিশ্বেও তেমন নেই। তবে ইদানীং ইউটিউব ও ভিডিওভিত্তিক তথ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। অপসাংবাদিকতা এখন বড় সমস্যা। একদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অন্যদিকে অপসাংবাদিকতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা দু’টোই নিশ্চিত করতে হবে।”
শফিকুল আলম আরও বলেন, “অপপ্রচারের কারণে ব্যক্তি-মানহানির ঘটনা বাড়ছে। অথচ কোনো অভিযোগ তুললেই বলা হয় ‘সরকার প্রেশার দিচ্ছে’। এই বাস্তবতায় জার্নালিস্ট প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্সের প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে অপসাংবাদিকতা মোকাবিলারও ব্যবস্থা থাকতে হবে।”
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে