Views Bangladesh Logo

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই : সালাহউদ্দিন আহমেদ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ১ জুন, বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্যের যাত্রা শুরু হয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, সেখান থেকেই স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না।’

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে তাদের নিজস্ব কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, এবং আইনসভাকে আইন প্রণয়নের কাজ করতে দিতে হবে। সেখানেই থাকবে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতার ভারসাম্য। আইনের ভাষায় যেটা বলা হয় ‘সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরি’, যার মূল কথা হলো—‘হারমোনিয়াস কোঅপারেশন ইন বিটুইন অল দ্য অর্গানস অব দ্য স্টেট’। তখন কোনো অঙ্গ আরেক অঙ্গের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না বা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না; বরং একে অন্যের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আপনারা এখানে সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু কেউ হতাশা প্রকাশ করেননি। আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ, আলোচনা চলছে।’

তিনি বলেন, সময় কিছুটা লাগছে, তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটি জায়গায় ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারব।

বিএনপির পক্ষ থেকে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বে থাকতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো, এখানেই ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি বন্ধ করা হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। তার জন্য কী করতে হবে? প্রথমত, বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি, সবাই ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এখন আমরা আরও একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের এমপিরা গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন। সেটি হবে আরেকটি বিপ্লব। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করাও একটি বড় অর্জন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ করি, তাহলে নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না। বরং নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা যদি নিজ নিজ সীমার মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়, সেই ব্যবস্থাটিই হবে প্রকৃত সংস্কার। আমরা সেই সংস্কার চাই যেখানে কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সংস্কার চাই, যার মাধ্যমে দেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হবে। সেই সংস্কার চাই, যার মাধ্যমে সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্ভব হবে এবং এর ফলে আমরা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারব।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ঐক্যমত্য কমিশনের প্রচেষ্টা মূলত নির্বাহী বিভাগকে বেশি নিয়ন্ত্রিত করার দিকে যাচ্ছে। নির্বাহী বিভাগ অতীতে একজন স্বৈরাচার তৈরি করেছিল, তাই বলে আমরা নির্বাহী বিভাগকে বিলুপ্ত করতে পারি না বা দুর্বল করতে পারি না। সংসদীয় পদ্ধতিতে একজন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে আইনসভাকে দুর্বল করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে—একটি কার্যকর চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ব্যবস্থা তৈরি করতে। সব বিভাগকে পাহারাদার বা সেফগার্ড হিসেবে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা নিজ নিজ এখতিয়ারে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে আর কোনোদিন এ দেশে স্বৈরাচারের জন্ম হবে না। আমরা ধীরে ধীরে সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে শুধু অনুরোধ করব, চোখ-কান খোলা রাখবেন। খরগোশের মতো কান সব সময় সতর্ক থাকবে। চোখ খোলা থাকবে কেন? দেখতে হবে, সত্যিই কী ঘটছে।’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এর মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু এবং নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ