দেশের অখণ্ডতায় রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত নবীন সৈনিকরা: বিজিবি মহাপরিচালক
দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবীন সৈনিকরা প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাইতুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিসি) প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মেজর জেনারেল সিদ্দিকী জোর দিয়ে বলেন, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এই সৈনিকেরা জাতির প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে না।
তিনি আরও বলেন, “তারা যে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা প্রদান করবে, তা নিশ্চিত করবে দেশের মানুষ যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে।”
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে ২৪ সপ্তাহের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের ৬৯৪ জন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবিতে যোগ দেন। এর মধ্যে ৬৫৮ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী রয়েছেন।
বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহীদ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সকল ছাত্র-জনতাকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন তিনি।
বিজিবির পরিবর্তিত দায়িত্ব সম্পর্কে মেজর জেনারেল সিদ্দিকী বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ খ্যাত এই বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষাসহ সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, মাদক ও অস্ত্রসহ অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে।
নবীন সৈনিকদেরকে ‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’- বিজিবির এই চারটি মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খলভাবে পালনের নির্দেশ দেন তিনি।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “শৃঙ্খলাই হচ্ছে একজন সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না, সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিক হিসেবে এই সকল পেশাগত ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। তাহলেই কেবল পূর্বসূরীদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করতে পারবে। ”
নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আজ নবীন নারী সৈনিকরা দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃপ্ত শপথ নিয়ে সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। নবীন নারী সৈনিকরা বিজিবির সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম-সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করবে।
১০৩তম ব্যাচের সেরা রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী সাইফ মিয়া ‘সেরা অলরাউন্ডার’ নির্বাচিত হন এবং তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অন্যান্য বিভাগে শীর্ষ পারফর্মারদেরও সম্মাননা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি নবনিযুক্ত সৈনিকদের সম্মানিত সশস্ত্র সালাম, ট্রিক ড্রিল প্রদর্শনী এবং বিজিবি ব্যান্ডের সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সামরিক ও বিজিবি কর্মকর্তারা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সংবাদকর্মীরা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে