এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের শাটডাউন চলবে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ এবং ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা চালু থাকবে।
শনিবার (২৮ জুন) দিনভর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান কার্যালয়ের সামনে এসব কর্মসূচি পালন শেষে আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, রোববারও (২৯ জুন) আন্দোলন চলবে।
সকাল থেকে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির সব গেট বন্ধ রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ‘অবরুদ্ধ’ প্রতিষ্ঠানটির সামনে শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি চলাকালে ঐক্য পরিষদের নেতাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বের হতেও পারছেন না কেউ। পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকাসহ সব পর্যায়ের নেতারা গেটের সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন। রয়েছেন ঢাকাসহ দেশের অন্য অফিসগুলো থেকে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
ফলে এনবিআরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সব সেবাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনেও আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রমওে।
দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী তারা। তবে এর আগে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তাকে দায়িত্বে রেখে গত ২৫ মে সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির আলোকে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘চেয়ারম্যান স্পষ্টতই ফ্যাঁসিবাদের দোসর। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রতিভূ হিসেবে কাজ করছেন তিনি। পলাতক আওয়ামী ফ্যাঁসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন আমলার (যাদের ছয়জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে) তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান তিন নম্বরে আছেন। সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২১ ও ২২ জুন একাধিক আদেশে রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। কর্মসূচিতে সম্মুখসারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এমন পাঁচজন আয়কর কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত কম রাজস্ব সম্ভাবনাময় দপ্তরে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এমনকি আদেশে প্রাপ্য যোগদানকাল না দিয়েই পরবর্তী কর্মদিবসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এটি চাকরির বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও অবৈধ।
হাছান মুহম্মদের অভিযোগ, এই অবৈধ আদেশের মাধ্যমে এনবিআরের চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত জিঘাংসা চরিতার্থ করছেন। তার এহেন কর্মকাণ্ড দুরভিসন্ধিমূলক। তিনি নিপীড়নমূলক বদলিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারের পরিবেশ বিনষ্ট করছেন।
তিনি বলেন, দেশ ও রাজস্বের স্বার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক দাবিগুলো ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাতে যেকোনো সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে এনবিআর সংস্কার বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।
১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগের অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর বিরোধিতায় ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতির আন্দোলন করেন রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তবে ২৫ মে রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে’।
এ আশ্বাসে ২৬ মে কলম বিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এরপরও দাবি আদায় না হওয়ায় ২১ জুন সংবাদ সম্মেলন এবং ২৩ জুন থেকে ফের অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবারও (২৬ জুন) তারা কর্মসূচি পালনে গেলেও এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের সব গেট বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।
সংকট সিরসনে বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার ডাকা বৈঠকে অংশ নেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং ১৬ জন সদস্য। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন এবং মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে