Views Bangladesh Logo

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধায় সিক্ত সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

রেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। বেলা ১১টার পর সেখানে মরদেহ নেওয়া হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মরদেহ রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তা শহীদ মিনারে স্থানান্তর করা হয়।

অপরাজেয় বাংলায় ফুলেল শ্রদ্ধা জানান কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

জাতীয় কবিতা পরিষদ জানিয়েছে, মরদেহ দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনারে রাখা হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। খবর পেয়ে অনেক লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী হাসপাতালে ছুটে যান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে, ৩ অক্টোবর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চালক ও পথচারীর সহায়তায় তাঁকে প্রথমে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে ল্যাবএইডে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল। পরদিন অস্ত্রোপচারে দুটি রিং পরানো হয়। কিছুটা উন্নতির পর লাইফ সাপোর্ট থেকে সরানো হলেও অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইয়েটসের কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব’ বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সর্বশেষ ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে তিনি ছিলেন একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। ছোটগল্পে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৪ সালে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিশাল মৃত্যু’ গল্পের মাধ্যমে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প’, ‘প্রেম ও প্রার্থনার গল্প’ এবং ‘সুখ ও দুঃখের গল্প’। উপন্যাসের মধ্যে ‘আজগুবি রাত’ ও ‘তিন পর্বেও জীবন’ পাঠকমহলে ব্যাপক প্রশংসা পায়।

চিত্রকলা ও নন্দনতত্ত্ব নিয়েও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬) এবং একুশে পদক (২০১৮)।

বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রস্থান গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ