সচিবালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নেতারা, ‘মার্চ টু যমুনা’ আপাতত স্থগিত
বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা বাড়ানোর তিন দফা দাবিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে সচিবালয়ে গেছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা। তারা ফিরে আসা পর্যন্ত বৃহস্পতিবারে (১৬ অক্টোবর) ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত রেখেছেন তারা।
দুপুর ১২টায় লংমার্চ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের। যুগ্ম সদস্য সচিব আবুল বাশার জানান, ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে তারা সচিবালয়ে আছেন। তারা ফিরে আসা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থা করবেন।
আবুল বাশার বলেন, তারা মনে করছেন, তাদের দাবির বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তাই সরকারের আহ্বানে সচিবালয়ে গেছেন। আলোচনা চলাকালে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত রাখছেন তারা।
শিক্ষকদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) ভাতা ও দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে এই আন্দোলনে নেমেছেন সারা দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েই আন্দোলন টানা পঞ্চমদিনের মতো অব্যাহত রেখেছেন তারা।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও ২০ শতাংশ ছাড়া আন্দোলন থামবে না বলে জানিয়েছেন জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে সারাদেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে স্কুল–কলেজগুলোতে ক্লাস কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ শিক্ষকদের সরাতে গেলে ধস্তাধস্তি, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচাজের ঘটনা ঘটে। পুলিশের হামলায় আহত হন বেশ কয়েকজন। এতে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে জোটের নেতাদের আহ্বানে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকেই লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি চলাকালে হাইকোর্টের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদযাত্রা আটকে দেয় পুলিশ। এরপর আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে ফিরে আসেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দিনভর আন্দোলন ও বুধবার বিকেলে শাহবাগ মোড়ে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ চললেও সরকার দাবি পূরণে সাড়া দেয়নি।
গত পাঁচদিন ধরে দিন-রাত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে সারাদেশের শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির হলেও কোনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন না। ক্যাম্পাস, শিক্ষক লাউঞ্জ কিংবা অফিসকক্ষে বসেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সরকার ৩০ সেপ্টেম্বর বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ালে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এরপর ৬ অক্টোবর বাড়িভাড়া ভাতা দুই থেকে তিন হাজার টাকার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের বেতন পান; মাসিক ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা, যা দেড় হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। উৎসব ভাতা মূলত বছরে দুইবার মূল বেতনের ২৫ শতাংশ হারে দেয়া হতো, যা পরে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে