ফেসবুকে লিংক পোস্ট সীমিত করছে মেটা
ফেসবুকে লিংক শেয়ার নিয়ে নতুন একটি পরীক্ষা শুরু করেছে মেটা। এই পরীক্ষার আওতায় প্রফেশনাল মোড ব্যবহারকারী ও ফেসবুক পেজগুলোর জন্য লিংক পোস্ট করার সংখ্যা সীমিত করা হচ্ছে। নির্ধারিত সীমার বেশি লিংক পোস্ট করতে চাইলে ব্যবহারকারীদের অর্থের বিনিময়ে মেটা ভেরিফায়েড সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে।
সম্প্রতি একাধিক ব্যবহারকারী এই পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।
তিনি জানান, পরীক্ষার আওতায় থাকা ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ চারটি লিংক পোস্ট করতে পারছেন। এর বেশি লিংক দিতে হলে মাসে অন্তত ১৪ দশমিক ৯৯ ডলার ব্যয়ে মেটা ভেরিফায়েড সাবস্ক্রিপশন নিতে হচ্ছে।
মেটা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চকে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এটি সীমিত পরিসরের একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষা কেবল প্রফেশনাল মোড ব্যবহারকারী ও ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
প্রফেশনাল মোডের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রোফাইলকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর অ্যাকাউন্টে রূপান্তর করতে পারেন, যার ফলে কনটেন্ট বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ থাকে। তবে নতুন এই পরীক্ষায় সেই ব্যবহারকারীরাই বাড়তি চাপে পড়ছেন।
মেটার এক মুখপাত্র বলেন, ‘লিংকসহ বেশি সংখ্যক পোস্ট করার সুবিধা মেটা ভেরিফায়েড গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত মূল্য যোগ করে কি না, তা বোঝার জন্যই এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।’
তবে সব ধরনের লিংকের ওপর এই সীমাবদ্ধতা নেই। ব্যবহারকারীরা মন্তব্যে লিংক দিতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট লিংকের ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। এ ছাড়া ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের ভেতরের পোস্টের লিংক শেয়ার করাও অনুমোদিত থাকবে।
মেটা জানিয়েছে, আপাতত সংবাদমাধ্যম বা প্রকাশকদের এই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। তবে কনটেন্ট নির্মাতা ও ব্র্যান্ডগুলোর ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে—বিশেষ করে যারা ব্লগ বা বাইরের ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করে দর্শক টানেন।
মেটার সর্বশেষ ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক ফিডের ৯৮ শতাংশের বেশি ভিউ আসে লিংকবিহীন পোস্ট থেকে। মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ ভিউ আসে লিংকযুক্ত পোস্ট থেকে। এই তথ্যই হয়তো মেটাকে নতুন এই পরীক্ষার পথে এগোতে উৎসাহ দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি শেয়ার হওয়া লিংকের তালিকায় ইউটিউব ও টিকটক শীর্ষে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সীমা ব্যাপকভাবে কার্যকর হলে কনটেন্ট নির্মাতারা বাধ্য হবেন মেটার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট প্রকাশ করতে, নতুবা সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে। এতে বাইরের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইতোমধ্যে অনেক প্রকাশক অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর কারণে তাদের ওয়েবসাইটে পাঠক কমে যাচ্ছে।
এর আগে এক্সসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমও লিংকযুক্ত পোস্টের গুরুত্ব কমিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই নতুন পরীক্ষা সেই প্রবণতাকেই আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে