শশী থারুরকে কড়া জবাব দিলেন মেঘমল্লার
সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র শিবিরের বিজয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুরকে কড়া জবাব দিলেন এই নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি দীর্ঘ পোস্টে মেঘমল্লার সরাসরি থারুরকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘প্রিয় মি. শশী থারুর, আমি নিশ্চিত এই বার্তাটি হয়তো আপনার কাছে পৌঁছাবে না। যদি পৌঁছায়ও, হয়তো এটিকে গুরুত্ব দেবেন না—আমার ইংরেজি আপনার মতো প্রাঞ্জল নয় বলেই। আমার নাম মেঘমল্লার বসু।
সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে আমি প্রতিরোধ পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলাম। রাষ্ট্রীয় সংস্থার সম্পৃক্ততা, ক্রমবর্ধমান ইসলামোফ্যাসিস্ট প্রবণতা ও বিপুল অর্থশক্তির বৈষম্যের মাঝেও আমি প্রায় পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছি। বলা যায়, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব করি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার ভোটারদের পক্ষ থেকে বলছি—বাংলাদেশে ডানপন্থি রাজনীতি নিয়ে আপনার মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। আপনার বিশ্লেষণ সঠিক হতে পারে, কিন্তু তা কেবল বাংলাদেশের অতি-ডানদেরই উপকার করে। আপনি উপলব্ধি করেন না, আপনার মন্তব্য জামায়াতের জন্য প্রচারে পরিণত হয়। অথচ আপনি বিনয় দেখান না।’
মেঘমল্লার থারুরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয় আপনার কাছে কেন এত উদ্বেগজনক? আপনি কি সেই ব্যক্তি নন, যিনি কেরালায় শবরিমালা মন্দিরে প্রবেশাধিকারের প্রশ্নে ডানপন্থি প্রচারণা চালিয়েছিলেন কেবল সিপিআইএম-কে হারানোর জন্য? যদি প্রতিবেশীকে উপদেশ দিতেই চান, আগে নিজ দেশে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের হারান। একটা প্রবাদ আছে—যারা কাচের ঘরে থাকে, তারা অন্যের ঘরে পাথর ছোড়ে না। যারা তিনবার মোদি-অমিত শাহকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের অন্য দেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মাথা ঘামানোর বিলাসিতা থাকা উচিত নয়।’
ভারতের ভূমিকাকে বাংলাদেশের জন্য ‘বিষাক্ত’ বলে অভিহিত করে মেঘমল্লার লিখেছেন, ‘আপনার মন্তব্যই আসলে শিবিরকে শক্তি জোগায়। যদি হাতে এত অবসর থাকে, আরও স্ট্যান্ড-আপ শো করুন। আগেরটাই যথেষ্ট বিনোদনমূলক ছিল। আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান নিজেরাই করব। আশা করি ভারতের জনগণও এক দিন হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের ভোটে হারাতে পারবে। আমরা বাংলাদেশে ইসলামোফ্যাসিস্টদের প্রতিরোধে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। প্রয়োজনে আমরা একে অপরের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করব। কিন্তু দয়া করে এই বক্তৃতা দেয়া বন্ধ করুন। আপনার দেশ আমাদের থেকে কোনো অংশে ভালো নয়।’
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে শশী থারুর জামায়াত-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের বিজয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘এটি হয়তো বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছে আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, কিন্তু এটি ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ও বিএনপির প্রতি মানুষের বিরক্তি বেড়েছে। অনেকে এই দুই দলের বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে বেছে নিচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রতার কারণে নয়, বরং এ জন্য যে দলটি, সঠিক হোক বা ভুল, দুর্নীতি ও কুশাসনে কলঙ্কিত নয়।’
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘এই প্রবণতা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে? ভারতকে কি তখন প্রতিবেশী হিসেবে জামায়াত সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে?’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে