আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
আজ ১৪ ডিসেম্বর - শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক গভীর শোক ও বেদনার দিন। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে জাতি এদিন তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়েছিল, সেই দুঃসহ স্মৃতিই প্রতিবছর এই দিনে নতুন করে নাড়া দেয়।
এবার ভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোসহ তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
যেভাবে সংঘটিত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষে যখন বাঙালি জাতি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বিজয়ের আগ মুহূর্তে সংঘটিত এই নৃশংসতা শুধু জাতিকেই নয়, পুরো বিশ্বকেই স্তম্ভিত করে দেয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুদিন আগে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা অপহৃত হন। চোখ বেঁধে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। পরে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে।
পরদিন সকালে ডোবা-নালা ও ইটখোলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা নিথর দেহগুলো স্বাধীনতার আনন্দকে মুহূর্তে পরিণত করে গভীর শোকে। বুলেটবিদ্ধ ও নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত দেহগুলো যেন বাঙালির মেধা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাতের সাক্ষ্য বহন করছিল। সদ্য জন্ম নিতে যাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশ সেদিন হয়ে পড়ে মেধাশূন্য।
স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা, সংগ্রামে প্রেরণা জোগানো এবং জাতিকে পথ দেখানোর অপরাধেই এই বুদ্ধিজীবীরা পরিণত হন ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে। ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য এই হত্যাযজ্ঞের নীলনকশা বাস্তবায়নে নেপথ্যে ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলি। ১০ ডিসেম্বর থেকেই তালিকা ধরে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়ে ১৪ ডিসেম্বর তা চূড়ান্ত রূপ নেয়।
আজকের কর্মসূচি
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সারাদেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।
সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর স্মৃতিসৌধে এবং ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণও শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
অন্যান্য আয়োজন
বিএনপি আজ সকাল ৬টায় কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল ৯টায় মিরপুর ও রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুর ২টায় রাজধানীতে আলোচনা সভা করবে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও আলোচনা সভা ও স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে বিশেষ নিবন্ধ। একই সঙ্গে দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে