Views Bangladesh Logo

এতিমখানায় ঠাঁই হলো জুলাই শহীদ আরমান মোল্লার সন্তানদের

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের শহীদ আরমান মোল্লা ওরফে নাহিদের দুই সন্তানের ঠাঁই হয়েছে এতিমখানায়। আরমান মোল্লা ২০২৪ সালের ২১ জুলাই নরসিংদী শিলমান্দী ইউনিয়নের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আরমান মোল্লা ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়া নয়াপাড়ার এলাকার বাসিন্দা। তার মৃত্যুতে স্ত্রী সালমা বেগম তিনটি নাবালক অবুঝ সন্তান নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন।

আরমান ছিলেন পাঁচ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর পরিবার চরম সংকট পড়ে। তার পুরো পরিবার এখন আরমানের অসুস্থ বাবার ওপর নির্ভরশীল।

তিন সন্তান নিয়ে সালমা তার বাবা মীর আলীর সাথে বসবাস করছিলেন।

আরমান মোল্লার তিন ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে মাহি (১০) ও রাফি (৭) কিছু দিন থেকে একটি এতিমখানায় থাকে। অর্থাভাবে তাদের এতিমখানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন মা সালমা বেগম।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আব্বার পক্ষে আমাগো সবার খরচ দেয়া সম্ভব না। এল্লিগা (এজন্য) মাইয়া আর পোলাডারে এতিমখানায় দিয়া দিছি।’

অসহায়ভাবে সালমা বলেন, 'আমার কোমরের হাড় ক্ষয় হওয়ার পর থেকে আমার জামাই ঘরের কাম-কাইজ (কাজ-কর্ম) করতে আমারে সাহায্য করত। আমি এই শইল (শরীর) লইয়া এহন ক্যামনে বাইরে কাম করমু?'

'কোমরের লিগা (জন্য) আমি ঘরের কাইজ-কাম বেশি করতে পারি না। আমার কোমরের ব্যাথার জন্য মাসে ৮০০ টাকার অষুধ লাগে। পেটে ঠিকমতো ভাতই জুটে না, অষুধ খামু কই থিকা। কোমরের ব্যাথায় আমি মাঝেমধ্যে বিছানা থেইকা উঠতে পারি না। আমার স্বামী ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই,’ বলেন তিনি।

সরকার থেকে এখনও কোনো সহায়তা পাননি জানিয়ে সালমা বলেন, ‘সরকার থেকে লাখ লাখ টাকা দিছে শুনছি। কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি। টাকার চেক পাইছে আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষরা। তারা আমাকে এক টাকাও দিবে না বইলা জানায় দিছে।’

অভিমানভরা কণ্ঠে সালমা বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে থাকতে তাগো লগে (শ্বশুর বাড়ি) সম্পর্ক ভালাই আছিল। এহন আমার স্বামীও নাই, তারাও আমার উপ্রে জুলুম করা শুরু করছে। আমার পোলাপানের মুখের দিকেও চাইল না হেরা।’

সালমা বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে, সকলের কাছে সাহায্য চাই। আমারে একটু সাহায্য করেন, যাতে আমি আমার স্বামী শহীদ আরমান মোল্লার রেখে যাওয়া পোলাপানগুলারে আমার কাছে রাইখা মানুষ করতে পারি। শহীদের সম্মান রাখতে পারি।’

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম সালমা ও তার সন্তানদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের বীর সন্তানরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরব। তাদের সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও অদম্য চেতনা আমাদের জাতি পুনর্গঠনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ