Views Bangladesh Logo

বিনা পারিশ্রমিকে ৩ হাজার কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া আর নেই

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার আলগাপাড়া গ্রামের মানুষ মনু মিয়াকে সবাই চেনেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়েছেন মানুষের জন্য—কারও মৃত্যুর সংবাদ পেলেই নিজ হাতে তৈরি করতেন তার শেষ আশ্রয়। সেই নিঃস্বার্থ মানুষটি আর নেই। শনিবার (২৮ জুন) সকালে নিজ বাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন। শনিবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

মনু মিয়া ছিলেন নিঃসন্তান। জীবনের বড় একটি অংশ ব্যয় করেছেন অন্যের জন্য। নিজের দিকে খুব একটা খেয়াল না রাখায় শরীরে বাসা বেঁধেছিল নানা রোগ। চিকিৎসার জন্য গত ১৪ মে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থতা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হলো না।

ইটনার চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী বলেন, তার মতো মানুষ এই সমাজে বিরল। ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ শুধু একটি উপাধি নয়, এটি ছিল তার জীবনদর্শন।

মনু মিয়া তার কাজের জন্য কখনো কোনো পারিশ্রমিক নেননি। বরং দূর-দূরান্তে কবর খুঁড়তে যাওয়া সহজ করতে নিজের ধানিজমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন। কারও মৃত্যুর খবর পেলেই মনু মিয়া কবর খননের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন। কিন্তু মাসখানেক আগে যখন তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন কিছু দুর্বৃত্ত তার ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে।

এই ঘটনায় কেউ দুঃখ প্রকাশ করলে মনু মিয়া কেবল বলতেন, ‘হয়তো আল্লাহ আমার কবর খোঁড়ার দায়িত্ব এখানেই শেষ করেছেন।’ কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ ছিল না তার।

মনু মিয়ার স্ত্রী আছেন, তবে তাদের কোনো সন্তান নেই। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা জানায়, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী নন—তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকবেন তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ