Views Bangladesh Logo

মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমারের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বড় সুপারস্টার হিসেবে গণ্য করা হয়। দর্শকের ভালোবাসায় তিনি পেয়েছেন ‘মহানায়ক’ উপাধি, আর তার রেখে যাওয়া শিল্পকর্ম আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে চলেছে।

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম নেওয়া উত্তম কুমার ছিলেন এক বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি শুধু অভিনেতাই নন, একইসঙ্গে ছিলেন গায়ক, সুরকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও পরিচালক। তিন দশকেরও বেশি সময়জুড়ে তার কর্মজীবনে তিনি পর্দার সামনে ও পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

তবে শুরুর পথ একেবারেই মসৃণ ছিল না। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার একের পর এক ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এমনকি তাকে ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ বলেও উপহাস করা হতো। ‘দৃষ্টিদান’ ছবির মাধ্যমে তিনি বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন, আর ‘মায়াডোর’ নামে একটি ছবি থাকলেও তা মুক্তি পায়নি। এত ব্যর্থতার পর এক সময় তিনি সিনেমা ছেড়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে চাকরির কথা চিন্তাও করেছিলেন। তবে স্ত্রী গৌরী চ্যাটার্জির অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয়েই থেকে যান।

পরবর্তীতে এম.পি. স্টুডিওর সঙ্গে চুক্তি করার পর তিনি ‘বাসু পরিবার’ ছবির মাধ্যমে কিছুটা পরিচিতি পান। তবে ১৯৫৪ সালে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবির অভাবনীয় সাফল্য তার ভাগ্য পুরোপুরি বদলে দেয়। এর মাধ্যমেই শুরু হয় উত্তম-সুচিত্রা যুগলবন্দি—যা বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ভালোবাসার রোমান্টিক জুটিগুলোর একটি হয়ে ওঠে। এর আগেও ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে তাদের রসায়ন নজর কেড়েছিল দর্শকদের।

উত্তম কুমার ১৯৪৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়কালে ২০২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন যার মধ্যে ৩৯টি ছিল ব্লকবাস্টার, ৫৭টি সুপারহিট এবং আরও ৫৭টি বাণিজ্যিকভাবে সফল। হিন্দি সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে ‘ছোটি সি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘দূরিয়ান’, ‘বান্দি’ ও ‘কিতাব’ উল্লেখযোগ্য। তবে বাংলা সিনেমাতেই ছিল তার সবচেয়ে শক্তিশালী উপস্থিতি।

অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু স্বীকৃতি অর্জন করেন। কলকাতার একটি মেট্রো স্টেশনের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে—‘উত্তম কুমার মেট্রো স্টেশন’—যা প্রমাণ করে, তিনি শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন শহরের গর্ব।

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন উত্তম কুমার। তার মৃত্যুদিনে আজও ভক্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। কারণ উত্তম কুমার কেবল একজন নায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমার এক যুগের নাম—একজন সত্যিকারের মহানায়ক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ