‘মোদের গরব, মোদের আশা’র গীতিকবির প্রয়ান দিবস আজ
‘মোদের গরব, মোদের আশা/আ-মরি বাংলা ভাষা’ কিংবা ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে’- জনপ্রিয় এসব বাংলা গানের রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেন। গীতিকার ছাড়াও একাধারে তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সুরকার ও গায়ক।
দেশাত্মবোধক, ভক্তিমূলক ও প্রেমভিত্তিক গান এবং ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে গভীর ও আবেগময় হাজারো কালজয়ী সৃষ্টির এই শ্রষ্ঠার প্রয়াণ দিবস মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট)। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট লখনৌতে প্রয়াত অতুলপ্রসাদ সেনের অস্থি সমাহিত হয়েছে গাজীপুরের কাওরাইদ ব্রহ্ম মন্দির প্রাঙ্গণে।
বাংলা গানে ঠুমরি ধারার প্রবর্তক এবং বাংলায় প্রথম গজল রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেন। তার সুরে ছিল হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রভাব। তিনি বাংলা গানে দাদরা, ঠুমরি, খেয়াল ইত্যাদির ধারাও প্রয়োগ করেছিলেন। ফলে তার গান একদিকে ছিল শাস্ত্রীয়, অন্যদিকে হৃদয়স্পর্শী। তার গানগুলো দেবতা, প্রকৃতি, স্বদেশ, মানব ও বিবিধ নামে পাঁচটি ভাগে বাংলার কাব্য ও সংগীত সংসারে নতুন ধারা নিয়ে এসে অতুলপ্রসাদের গান নামে স্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।
অতুলপ্রসাদের জন্ম ১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মাতুয়াইলে। আদি নিবাস ছিল শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে। বাবা রামপ্রসাদ সেন, মা হেমন্তশশী। অল্প বয়সেই তিনি বাবাকে হারান এবং মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছে বড় হন। গুপ্ত উন্মুক্ত, উদার মনের ঋষিতুল্য মানুষ কালীনারায়ণ ছিলেন ভক্তিমূলক গানের রচয়িতা ও গায়ক। তার কাছ থেকেই অতুলপ্রসাদের সংগীত সাধনার শুরু।
১৮৯০ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এরপর লন্ডনের মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। সেখানে চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ, সরোজিনী নাইডুর মতো বিশিষ্টদের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয় ছিলেন তিনি। ১৮৯৪ সালে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলায় ফেরেন এবং পরে লখনউতে আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯২২-২৩ সালে কলকাতা থেকে প্রথম অতুলপ্রসাদের গানের রেকর্ড বের হয় সাহানা দেবী ও হরেন চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। অতুলপ্রসাদ রচিত গানের সংখ্যা ২০৬টির মতো। এর ৫০–৬০টি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এসব গানের সংকলন ‘গীতিপুঞ্জ’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে জীবোদ্দশায়ই। মৃত্যুর পরও তার গান কয়েকটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়।
কাজী নজরুল ইসলামসহ পরবর্তী প্রজন্মের গীতিকাররা অতুলপ্রসাদ থেকেই অনুপ্রাণিত। তার ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে