বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
যুক্তরাজ্যের কড়া অভিবাসন নীতির কারণে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির কৌশল নতুন করে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর। লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আপাতত বাংলাদেশ থেকে নতুন কোনো শিক্ষার্থীকে আর ভর্তি নেবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়টি কিউএস র্যাংকিংয়ে বিশ্বে ১০০১তম অবস্থানে রয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট (BCA)–এর আসন্ন পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্রিন’ কমপ্লায়েন্স স্ট্যাটাস ধরে রাখতে শিক্ষার্থী ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে।
লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর গ্যারি ডেভিস জানিয়েছেন, ভিসা প্রত্যাখ্যানের উচ্চ হার, বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, তাদের এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা প্রত্যাখ্যানের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আবেদনকারীরাই ছিলেন বাংলাদেশি। যা ইউকে ভিসা অ্যান্ড ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ডেভিস জানান, এই হার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমপ্লায়েন্স অবস্থানকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাই ৫ শতাংশ প্রত্যাখ্যান হার সীমার ভেতর থাকার জন্য তারা বাংলাদেশ থেকে নতুন আবেদন না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে যারা ইতোমধ্যে স্টাডি অ্যাকসেপ্টেন্স কনফারমেশন (সিএএস) পেয়েছেন, তারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিএএস প্রত্যাহার করে দ্রুত টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এই সিদ্ধান্ত শুধু লন্ডন মেট্রোপলিটানেই সীমাবদ্ধ নয়। গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি কমপ্লায়েন্স ঝুঁকিতে থাকা কোর্সগুলোতে আন্তর্জাতিক ভর্তি বন্ধ করেছে। ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ডও সুদান, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে। তবে তারা সিএএস পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে যুক্তরাজ্যে স্টাডি ভিসা অনুমোদনের হার নেমে এসেছে ৬৩ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।
এই পরিস্থিতি ঘটছে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাজ্য সরকার অভিবাসন নীতিতে একের পর এক কঠোরতা আরোপ করছে। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলদের নিয়ে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যার ফলে স্টাডি ভিসায় সামগ্রিকভাবে ১৪ শতাংশ হ্রাস দেখা দিয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত হতে যাওয়া নতুন অভিবাসন নীতিতে আরও কিছু প্রস্তাবনা আসতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে—আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার (সেটেলমেন্ট) যোগ্যতার সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে দশ বছর পর্যন্ত করা।
এই সবকটি পরিবর্তন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তুলছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে