ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশের ৫টি ইসলামী ধারার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে এই পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি শক্তিশালী ইসলামী ধারার ব্যাংক গঠন করা হবে। যে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে একীভূত করা হবে তার মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শেষের দিকে এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক মিলে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেই উদ্যোগ থেমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে সেই প্রচেষ্টা শুরু করতে যাচ্ছে। যে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাদের শাখা সংখ্যা হচ্ছে ৭৭৯টি। জনবল রয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি। গ্রাহক রয়েছেন ৯২ লাখের মতো। ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। একীভূত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংকগুলো শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ছাড়া আর সবাই কর্মরত থাকবেন। একীভূতকরণ সম্পন্ন হওয়ার পর বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত তিন বছর সময় লাগতে পারে। যেসব ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মালিকগণ বিগত সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এর মধ্যে একাধিক ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের হাতে।
বিগত সরকার আমলে দেশের অর্থনীতির যে খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টর। বিশেষ করে দলীয় অনুগতদের ঢালাওভাবে ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কারণে দেশে চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। বেশ কিছু ব্যাংক সন্তোষজনকভাবে চলছে না। এতদিন রাজনৈতিক কারণে বিপন্নপ্রায় ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার মতো একটি উদ্যোগ; কিন্তু শুধু দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ করলেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না। ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা সমাধান করতে হলে ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পরিচালন নীতিমালা আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে হবে।
গত সরকার আমলে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই সেক্টরের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিকমানের আইনগুলো এমনভাবে পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়েছে যাতে সুশাসন বিপন্ন হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর কার্যত লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যারাই অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে একমাত্র আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যতীত আর কেউই সরাসরি ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি যেহেতু সরাসরি ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাই এমনভাবে ব্যাংকিং খাতের আইনগুলো পরিবর্তন করেন যাতে ঋণখেলাপি ও দুষ্ট ঋণ গ্রহীতাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না। তার এই বক্তব্য শ্রবণ করে সংশ্লিষ্ট মহল আশান্বিত হয়েছিল; কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তার কথার মর্মার্থ সবার নিকট পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি এমনভাবে প্রচলিত আন্তর্জাতিকমানের ব্যাংকিং আইনগুলো পরিবর্তন করেন যাতে কিস্তি আদায় না করেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানো যায়। কীভাবে আন্তর্জাতিকমানের আইনগুলো পরিবর্তন করা হয় তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
ঋণমান শ্রেণিকরণের সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। আগে কোনো ঋণ হিসাবের নিকট পাওনা কিস্তি নির্ধারিত তারিখে পরিশোধিত না হলে পরদিন থেকেই সেই ঋণ হিসাব খেলাপি ঋণ আকারে শ্রেণিকৃত হতো; কিন্তু এই আইন পরিবর্তন করে কোনো ঋণ হিসাবের নিকট পাওনা ঋণের কিস্তি নির্ধারিত দিনে পরিশোধিত না হলে পরবর্তী তিন মাস সময় দেয়া হতো। তারপর ঋণ হিসাবটি শ্রেণিকরণ করা হতো।
আগে কোনো ঋণ হিসাব অবলোপন করতে হলে ঋণ হিসাবটি মন্দমানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরপূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে ঋণ হিসাবটি অবলোপন করা হতো। ঋণ হিসাব অবলোপন অর্থ পাওনা ঋণের দাবি ত্যাগ করা বা মওকুফ করে দেয়া নয়। ঋণ হিসাবের পাওনা অর্থের হিসাব আলাদা একটি অ্যাকাউন্টের সংরক্ষণ করাকে বুঝায়। তবে ব্যাংক মনে করে অবলোপনকৃত ঋণ হিসাবের নিকট পাওনা অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কোনো অর্থ আদায় হলে তা সরাসরি ব্যাংকের মুনাফায় যুক্ত হয়। এই আইন পরিবর্তন করে কোনো ঋণ হিসাব মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পর ২ বছর অতিক্রান্ত হলেই তাকে অবলোপনের সুযোগ দেয়া হয়। এ জন্য ৫ লাখ টাকার কম ঋণের স্থিতির ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের শর্ত প্রত্যাহার করা হয়। একইভাবে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান তুলে নেয়া হয়। ফলে অবলোপনকৃত ঋণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এই ছাড়কৃত সুযোগ ব্যবহার করে একশ্রেণির উদ্যোক্তা/ঋণ গ্রহীতা তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব অবলোপন করে নেন।
আগে কোনো ঋণ হিসাব সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতফসিলিকরণ করা যেত। প্রথমবার ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ ব্যাংকে নগদ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা দিতে হতো। দ্বিতীয়বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট আকারে ব্যাংকে জমা দিতে হতো; কিন্তু অর্থমন্ত্রী থাকাকালে আ হ ম মুস্তফা কামাল মাত্র ২ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়। ৩৮ হাজার ব্যক্তি ও কোম্পানি এই সুযোগ নিয়ে তাদের ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ করেছে। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদের বিতর্কিত নির্বাচনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে পরের বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস চলে। সেই সময় শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অজুহাতে সরকার সমর্থক একটি চিহ্নিত মহল ৫০০ কোটি টাকা ও তদুর্ধ্ব অঙ্কের খেলাপি ঋণ হিসাব পুনর্গঠন করে নেয়। সামান্য ডাউন পেমেন্ট প্রদানের মাধ্যমে ঋণ হিসাবগুলো ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠন করে নেয়। ঋণ হিসাব পুনর্গঠন আসলে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ। ১১টি উদ্যোক্তা গোষ্ঠী ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে নেয়। প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাহলে এরকম সুযোগ দেয়া হলে তা সবার জন্যই অবারিত করা উচিত ছিল। যে ঋণ হিাসবগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে আবারও খেলাপি হয়ে পড়ে।
আগে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে একই পরিবার থেকে একযোগে ২ জন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম ৩ বছর করে মোট ৬ বছর) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। এই আইন পরিবর্তন করে একই পরিবার থেকে ৪ জন পরিচালন নিয়োগ এবং তাদের অব্যাহতভাবে তিন টার্ম অর্থাৎ ৯ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়। এতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) নিকট থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণকালে এই আইন কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে একই পরিবার থেকে একযোগে তিনজন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারছেন।
বিগত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগে একটি আইন করা হয় তা অত্যন্ত সমালোচিত হয়েছে। আগে নিয়ম ছিল কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি শিল্প ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে অন্য শিল্পগুলো ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতো। এই আইন পরিবর্তন করে নতুন বিধান জারি করা হয়েছে। এখন কোনো উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর একটি শিল্প ঋণ খেলাপি হলেও অন্য শিল্পগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারে।
সরকার সমর্থক উদ্যোক্তা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অনেকদিন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধোত্তর বিশ্ব অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিলে অধিকাংশ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে অর্থের জোগান কমিয়ে আনে। বিষয়টি এই রকম- কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন পলিসি রেট বৃদ্ধি করে তখন ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণকালে আগের তুলনায় বেশি সুদ প্রদান করতে হয়। ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি সুদ ধার্য করে। এতে ঋণ গ্রহণ প্রবণতা কমে যায় যা বাজারে অর্থ সরবরাহ হ্রাস করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। আগে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদের হার কিছুদিন আগ পর্যন্তও ৯ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় সস্তা হয়ে পড়ে। একশ্রেণির ঋণ গ্রহীতা ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। এমনকি বিদেশেও পাচার করে। এক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নকালে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ধার্য করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সেই সময় ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছিল ৭৬ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছিল ১৪ শতাংশ করে। তাহলে প্রশ্ন জাগে,ব্যক্তি খাতে দেয়া এত বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ কোথায় গেল? কিছুদিন আগে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশের নিচে। দু-একটি উদ্যোক্তা গোষ্ঠী যারা একাধিক ব্যাংকের মালিক, তারা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক দিন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত করে রেখেছিল। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজার চাহিদার চেয়ে অনেক কম ছিল। প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকায় নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তখন কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলার ১২২/১২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। ক্রলিংপেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা শুরু হলে মাত্র একদিনের ব্যবধানেই প্রতি মার্কিন ডলার বিনিময় হার ৭ টাকা বৃদ্ধি পায়। একশ্রেণির অর্থনীতিবিদ বলছিলেন, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটবে; কিন্তু কিছু দিন আগে আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়; কিন্তু মুদ্রাবাজারে তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়নি।
আগে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা থেকে ১২৩ টাকা। এখনো সেই মূল্যেই মার্কিন ডলার বিক্রি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থির করে রাখার ফলে রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশ মোট ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এটা এ যাবৎকালের মধ্যে কোনো একক বছরে আহরিত রেমিট্যান্সের চেয়েও বেশি। এপ্রিল মাসে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। অতীতে আর কখনোই একক মাসে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরিত হয়নি। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তা বিগত সরকার আমলের ভ্রান্ত নীতির ফল।
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের মাধ্যমে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছেন; কিন্তু ব্যাংকিং সেক্টর পরিচালনার জন্য যেসব আইনি কাঠামো রয়েছে তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু ব্যাংক একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করা যাবে না। বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারলেই সমস্যা সমাধান সহজতর হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে