চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অতীশ-চৈতন্য-লালন সাধনার উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ নিয়ে আলোচনা ও চর্যাপদের বিভিন্ন পদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছিল ‘চর্যা-সাধনার উত্তরাধিকার: অতীশ-চৈতন্য-লালন’ শীর্ষক সংগীত-সেমিনার।
ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এই আয়োজন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাধকশিল্পীরা সমবেতভাবে লুইপা রচিত চর্যাপদের প্রথম পদ পরিবেশন করেন। পরিবেশনায় অংশ নেন বরিশালের শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের অন্তর সরকার, শরিয়তপুরের শীলা মল্লিক, জামালপুরের হেলাল উদ্দিন, সুনামগঞ্জের মণীন্দ্র দাস, কিশোরগঞ্জের অন্ধ আল আমিন সরকার পিপাসী, ঝিনাইদহের ফতেহ কামাল, পাবনার ফকির আবুল হাশেম, পটুয়াখালীর আনিস মুন্সী, কিশোরগঞ্জের জিল্লুর সরকার ও সিদ্দিক ফকির।
এছাড়া, মল্লারী রাগে আদি চর্যাপদের ৩৫ নম্বর গান পরিবেশন করেন সাধিকা সৃজনী তানিয়া।
সেমিনারের মুখ্য বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও গবেষক ড. কিথ ই. কান্তু। তিনি বলেন, “চর্যাপদ বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিচ্ছিন্ন কোনো উপাদান নয়। এর ধারাবাহিকতা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান থেকে ইসলামী সুফিসাহিত্যের শেখ জাহিদের আদ্যপরিচয়, পরবর্তীকালের ফকির বিলাস হয়ে লালন সাঁইয়ের গানের বাণীতে বর্তমান। চর্যাপদের সাধকেরা যেমন মানবদেহের মধ্যে মণি, রস, ধন, রত্নের সন্ধান দিয়েছেন, বাংলাদেশের সর্বকালের সাধকেরাই সেই সাধনা ধারণ করে এসেছেন। এই পুনর্জাগরণ আমাদের প্রাচীন সাধনার সাথেই সংযুক্ত করেছে।”
ড. কান্তু একতারা ও বায়া বাজিয়ে চর্যাপদের ২৮ নম্বর গান, শেখ জাহিদের আদ্যপরিচয় থেকে অংশবিশেষ এবং লালন সাঁইয়ের গান পরিবেশন করেন।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কবি রাজিব দাশ, বরিশালের সাধক কবি ও চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সুরকার-শিল্পী শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের বাউল অন্তর সরকার, শরিয়তপুরের শীলা মল্লিক, কিশোরগঞ্জের আল আমিন সরকার পিপাসী, সুনামগঞ্জের মণীন্দ্র দাস ও পাবনার ফকির আবুল হাশেম। তাঁরা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান রচিত চর্যাগীতি পরিবেশনের পাশাপাশি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন-সাধনা ও লালন সাঁইয়ের মানবপ্রেমের জয়গান তুলে ধরেন।
সংগীত-সেমিনারের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লার্নিং ডিজাইন স্টুডিওর লার্নিং ডিজাইনার মিখাইল ইদ্রিস।
আগামীকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫-এর তৃতীয় ও শেষ দিন। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে চর্যাপদের গানের প্রশিক্ষণ কর্মশালা। প্রশিক্ষণ দেবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চর্যাপদ গানের সুরকার ও প্রশিক্ষক সাধিকা সৃজনী তানিয়া, শাহ আলম দেওয়ান এবং বাউল অন্তর সরকার।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হবে ভাবসাধকদের অংশগ্রহণে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের আসর।
পরে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ এবং এক যুগ ধরে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পীদের ক্রেস্ট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
সমাপনী ভাষণ দেবেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু।
তৃতীয় দিনের উপস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন ভাবনগর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নূরুননবী শান্ত এবং কবি শাহেদ কায়েস।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে