সর্বশেষ অবস্থা: খালেদা জিয়ার চিরপ্রস্থান
বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী ও জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই।
আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর দিতে ভিউজ বাংলাদেশ এর বিশেষ ব্যবস্থা...
অস্ট্রেলিয়ার শোক
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। শোকের এই সময়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দেশটি।
আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন জানায়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী ও চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
কানাডার শোক
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে কানাডা। একই সঙ্গে মরহুমার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দেশটি।
আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশন জানায়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে কানাডা তাঁর পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে।’
হাইকমিশন আরও বলেছে, ‘কানাডা আশা প্রকাশ করে যে এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবার শোক সইবার শক্তি ও ধৈর্য খুঁজে পাবে।’
৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বুধবার সাধারণ ছুটি
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে বুধবার এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শুরুর আগে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
খালেদা জিয়ার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে: রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিশেষ শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মহীয়সী নেত্রীর প্রয়াণে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার শোক বার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও তার অগণিত রাজনৈতিক অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। জাতির এই শোকের মুহূর্তে তিনি দেশবাসীকে মরহুমার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করার এবং তার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শোক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এক্স হ্যান্ডলে এই শোক জানানো হয়েছে।
শোকবার্তায় বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। খালেদা জিয়া তার দেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’
আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। বহু বছর ধরেই খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মত্যুতে শোক জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তার এক্স হ্যান্ডেলে শোক প্রকাশ করতে বার্তা দেন।
তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা।’
ইসহাক দার আরও লেখেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ স্থান দান করুন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তওফিক দান করুণ। আমিন।
শেখ হাসিনার শোক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ছিল অপরিসীম। তার মৃত্যু দেশের বর্তমান রাজনীতিতে এবং বিএনপির নেতৃত্বে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি তার ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ যেন তাদের সবাইকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি ও ধৈর্য দান করেন।
নরেন্দ্র মোদির গভীর শোক
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই শোকবার্তা প্রকাশ করেন তিনি।
শোকবার্তায় তিনি বেগম জিয়াকে বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেন।
শোকবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ঢাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। তার পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। এই শোক সইবার শক্তি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যেন তার পরিবারকে দান করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির উন্নয়ন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
নিজের স্মৃতিচারণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালে ঢাকায় তার সঙ্গে আমার উষ্ণ সাক্ষাতের কথা আমি স্মরণ করছি। আমরা আশা করি, তার দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে।’
শোকবার্তার শেষাংশে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক, যোগ দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
সেখানে বেগম জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করাসহ বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সকালে একথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
"নেত্রীর মৃত্যুর খবর জানার পর সকালে ফোন করে তিনি শোক জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সকালে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে উনি জানিয়েছেন। তারা নিজেরা আলোচনা করার পর বিএনপির সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে," বলেন মির্জা ফখরুল।
এবৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি কেবিনেট মিটিংয়ে যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিএনপির প্রেস উইং।
প্রধান উপদেষ্টার শোক
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর অবদান, দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তাঁর প্রতি জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে, মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
নানা মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথ দেখিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারাল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি’র চেয়ারপার্সন, যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।
তিনি বলেন, তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটাতে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বহু কর্ম ও সিদ্ধান্ত দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তিনি মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করেন, যা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ভীষণভাবে সফল ছিলেন। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে তিনি পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেখানেই তিনি জয়লাভ করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর আপসহীন ভূমিকা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে জাতিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব সাফল্যের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে তিনি দেশবাসীকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।
সাত দিন শোক পালনের কর্মসূচি বিএনপির
দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সাতদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার থেকে আগামী একসপ্তাহ দলটির সব কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। এই সময়ে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন দলের নেতাকর্মীরা।
সেইসঙ্গে, নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়সহ সব কার্যালয়ে শোক বই খোলা রাখবে বিএনপি।
মঙ্গলবার সকাল নয়টায় দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
"এগুলো প্রাথমিকভাবে নেওয়া কর্মসূচি। পরবর্তীতে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে," কর্মসূচি ঘোষণার আগে সাংবাদিকদের বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া জানাজা ও দাফনের ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
চীনের গভীর শোক প্রকাশ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে চীন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে পাঠানো এক শোকবার্তায় এ অনুভূতি প্রকাশ করেন।
শোকবার্তায় ওয়াং ই বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রবীণ ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, যিনি চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং চীন–বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব গড়ে তোলে।
শোকবার্তায় চীন বেগম খালেদা জিয়ার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে জানায়, চীন–বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতিতে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
এতে আরও বলা হয়, চীন ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সঙ্গে কাজ করে যেতে আগ্রহী—দুই দেশের প্রবীণ প্রজন্মের নেতাদের গড়ে তোলা বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেওয়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং চীন–বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতা অংশীদারত্বকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মারা গেছেন।
দলের পক্ষ থেকে তার এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করার পর থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসতে শুরু করেছেন।
তাদের অনেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তবে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ তাদের আটকে রেখেছে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে দেশজুড়ে দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে নেমে আসে শোক।
এদিকে, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসনের মৃত্যু উপলক্ষে সারা দেশে সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময় দোয়া ও কোরআন খতম হবে।
তিনি এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, বিএনপির প্রতিটি জেলা কার্যালয়ে শোক বই খোলা হবে।
জানাজা ও দাফনের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন রাজনীতিতে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসারত অবস্থায় দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের এই প্রয়াণে দেশের রাজনীতিতে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
খালেদা জিয়ার জানাজা হতে পারে বুধবার
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার ।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'দলীয়ভাবে জানাজার প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পরামর্শের পর জানানো হবে। আজ দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে পারেন খালেদা জিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর স্বামী শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের করবের পাশে দাফন করা হতে পারে।
তিনি বলেন, বুধবার ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা শেষে সংসদ ভবন এলাকার পাশে অবস্থিত জিয়া উদ্যানে তার স্বামী ও বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে খালেদা জিয়াকে দাফন করা হতে পারে।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মারা গেছেন।
আল্লাহ খালেদা জিয়াকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন: জামায়াত আমির
বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে রহম করুন, ক্ষমা করুন এবং তাঁর প্রিয় জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।’
‘তার আপনজন, প্রিয়জন ও সহকর্মীদেরকে মহান আল্লাহ সবরে জামিল দান করুন। আমিন।’ বলেন আমির।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ‘মা, মাটি ও মানুষের নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের এই প্রয়াণের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে বিশিষ্ট একজন নেত্রীর উপস্থিতির অবসান ঘটলো।
রাজনীতিবীদদের শোক
বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
সকালেই বিবৃতি দিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ গভীর শোক প্রকাশ করছে।
শোকবার্তায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, দেশপ্রেমিক ও সাহসী কণ্ঠস্বর। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন অভিজ্ঞ ও সংগ্রামী নেতাকে হারালো।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে তার নাম আপসহীন নেত্রী হিসেবে থাকবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আশির দশকে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী সরকার উচ্ছেদের আন্দোলনে তার আপসহীন ভূমিকা জনগণ মনে রাখবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী আন্দোলনে ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন দৃঢ়।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে শোক প্রকাশ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে চিরদিনের মতো একজন আপসহীন নেত্রীর শূন্যতা সৃষ্টি হলো। অত্যন্ত গভীর পরিতাপ ও দুঃখের সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করছি।
সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বানীতে এম এ আউয়াল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র যখনই বিপদে পড়েছে তখন বেগম জিয়া তার সমস্ত শক্তি নিয়ে দেশ ও জনগণের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। যে কারণে মানুষ তাকে মা, মাটি ও মানুষের নেত্রী হিসেবে জানে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে