Views Bangladesh Logo

সর্বশেষ অবস্থা: বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

স্মরণকালের অন্যতম একটি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। মাত্র কয়েক মাস আগেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারাদেশে কয়েক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তবে বুধবার (২১ আগষ্ট) মধ্যরাত থেকে নতুন করে শুরু হওয়া এই বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রবল বর্ষণে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ফলে বেশ কয়েকটি নদীর পানি উপচে পড়েছে এবং নদীর বাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে বন্যাদুর্গত ১১টি জেলার মধ্যে কুমিল্লা ও খুলনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে নোয়াখালী ও ফেনী জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।

বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ভিউজ বাংলাদেশের এই আয়োজন।

কুমিল্লায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা
কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ অবনতির দিকে যাচ্ছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, এরইমধ্যে জেলার ১৪ উপজেলায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।

এখনো গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে গোমতী নদীর বাধ ভাঙনের ফলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়াও কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম মনোহরগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।

গোমতীর বাধ ভাঙনের ফলে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬০ হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার। ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলি বলেন, ‘কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১১৮টি ইউনিয়নের ৭ লক্ষাধিক মানুষ। আমরা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি। সহায়তা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।’

নোয়াখালীতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি
গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ অঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলা শহর ও আশপাশের উপজেলায় ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পানি কমেছে। এছাড়াও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত রেগুলেটর দিয়ে তীব্র গতিতে নামছে পানি।

ফেনীর দুই উপজেলায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি
দুইদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও জেলা শহর ও সোনাগাজী উপজেলার সর্বত্র প্লাবিত। শনিবার (২৪ আগস্ট) জেলা প্রশাসন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, জেলায় তিন লাখের বেশি মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, ছাত্র-জনতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে উদ্ধার কাজ চলমান আছে। এ পর্যন্ত বন্যাকবলিতদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৫০০ টন চাল এবং ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

খুলনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৯ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি লাখো মানুষ
খুলনার পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ১৯ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম।

জানা যায়, কালীনগর গ্রামের পাশেই রয়েছে ভদ্রা নদী। দুপুরের দিকে সেখানে পাউবোর ২২ নম্বর পোল্ডারের উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধের প্রায় ৯০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে যায়। এ সময় ওই পোল্ডারের ভেতরে থাকা ১৩টি গ্রামের মধ্যে পানি প্রবেশ শুরু করে। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো– কালীনগর, দারুল মল্লিক, গোপী পাগলা, তেলিখালী, সৈয়দখালী, খেজুরতলা, সেনের বেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ী, বাগীরদানা, দুর্গাপুর, হরিণখোলা ও নোয়াই। এদিকে, দাকোপের খলিসা এলাকা কাজীবাছা নদীর তীরে। এ স্থানটিতে ৫০-৬০ হাত ভেঙেছে। ভাঙন বাড়ছে জোয়ারের চাপের কারণে। ফলে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলো হচ্ছে খলিসা, পানখালী, আনন্দনগর, ছোট চালনা, মৌখালী ও হোগলাবুনিয়া।

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘২২ নম্বর পোল্ডারের আয়তন প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর। ভদ্রা নদীর ৩০ মিটার ভেঙেছে। পানি আটকানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ২০০ বাঁশ এবং দুটি মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে কাজ চলমান আছে।’

বন্যায় ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯ লাখ মানুষ , মৃত ১৮
দেশের ১১ জেলায় চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯ লাখের বেশি মানুষ।

মারা যাওয়াদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪, কক্সবাজারে ৩, চট্টগ্রামে ৫, নোয়াখালীতে ৩ এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে মারা গেছেন একজন করে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন মানুষ। দুর্গত ১১ জেলায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে।

গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে প্লাবিত হয়েছে ৭৭টি উপজেলা।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭ ইউনিয়ন/পৌরসভা। ১১ জেলায় মোট পানিবন্দি রয়েছেন ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮ জন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন।

বন্যাকবলিত ১০ জেলায় ১২৩৫ মোবাইল টাওয়ার অকেজো: বিটিআরসি
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০ জেলার ১৩ হাজার ৪৯১টি মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে ১ হাজার ২৩৫টি অকেজো হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। জেলাগুলো হলো- নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট।

ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটর এবং টাওয়ার অপারেটরদের পরিষেবাগুলো পুনরায় চালু করার জন্য সরঞ্জাম, জেনারেটর এবং জ্বালানি বহনের জন্য জাহাজ এবং স্পিডবোটসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া টাওয়ারগুলো সচল হবে না। অন্যদিকে জেনারেটরের মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপিত হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় চার্জিং সুবিধাও দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মৌলভীবাজার ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনরায় সচল করার চেষ্টা করছে মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কো-অপারেটর ও কর্তৃপক্ষ ।

ঢাকা-সিলেট রুটে রেল চলাচল শুরু
বন্যার কারণে দুই দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকা-সিলেট রেল যোগাযোগ শনিবার (২৪ আগস্ট) আবার সচল হয়েছে। এদিন সকাল ১১টায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত পরশু থেকে ঢাকা-সিলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ হয় যায়। শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে ওই রুটে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চালু হয়েছে। সকালে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের শায়েস্তাগঞ্জের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সাইফুল্লাহ রিয়াদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে অনুদান পাঠানোর আহ্বান
চলমান ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য-সহায়তা দেওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই মহতী আগ্রহ-উদ্যোগকে অন্তর্বর্তী সরকার স্বাগত জানিয়েছে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এ তথ্য জানান। আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের হিসাবে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারবেন।

হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। হিসাব নম্বর : ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩।

এ তহবিলের অর্থ ত্রাণ ও কল্যাণকাজে ব্যয় করা হয়। সহায়তার অর্থ সরকার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করে এর যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করবে বলেও জানান তিনি।

বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাত ১০টায় খোলা হবে কাপ্তাই বাঁধ
কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ রাত ১০টায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জল কপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার বিকেল ৩টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৭.৬৬ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় হ্রদের উজান ও ভাটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে পানি নিষ্কাশনের জন্য শনিবার রাত ১০টায় স্পিলওয়ের ১৬টি গেটের ছয় ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউবিক ফিট পানি নিষ্কাশিত হবে।

এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে হ্রদের ইনফ্লো ও বৃষ্টিপাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইনফ্লো বেশি হলে অর্থাৎ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে স্পিলওয়ের গেট খোলার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ