Views Bangladesh Logo

’লালন সম্রাজ্ঞী' ফরিদা পারভীন চিরনিদ্রায় শায়িত

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

কুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত লালনশিল্পী ফরিদা পারভীন রোববার রাতে কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত হয়েছেন।

এশার নামাজের পর রাত ৯টার দিকে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে তাঁর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কবরস্থানে পৌঁছায়।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন এ সময় এ শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তাঁর ছেলে ইমাম নাহিল সুমনসহ পরিবারের সদস্যরা দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন, কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার, লালন গবেষক লালিম হক, লালন একাডেমির সদস্যসহ অসংখ্য মানুষ প্রিয় এই 'সাংস্কৃতিক আইকনকে' শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হন।

দিনের প্রথমভাগে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাঁর মরদেহ রাজধানীর তেজকুনিপাড়া বাসায় আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১টার দিকে পরিবার মরদেহ নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। সন্ধ্যা মাগরিবের পর দাফনের সময় নির্ধারিত থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা বিলম্বিত হয়।

শনিবার রাতে মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফরিদা পারভীন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

গত বুধবার থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এবং বহু অঙ্গ বিকল হয়ে পড়েছিল। একাধিক মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন এই গুণী শিল্পী। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের জন্য ২ সেপ্টেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

গত ছয় মাসে তাঁকে চারবার আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সম্প্রতি তাঁর দুই কিডনিই কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং বহু অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ায় অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত দিয়ে তাঁর সংগীতজীবন শুরু করেন।

১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরে মকসেদ আলী শাহ-এর কাছে লালনসংগীতে তালিম নিয়ে এ ধারার জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হন।

তাঁর প্রথম স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার ও শিল্পী আবু জাফর, যিনি 'এই পদ্মা এই মেঘনা' দেশাত্মবোধক গানের জন্য সুপরিচিত। এই সংসার থেকে তাঁদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম নেয়। তারা হলেন, জিহান ফারিয়া, ইমাম নিমেরি উপল, ইমাম নাহিল এবং ইমাম জাফর নুমানী। পরে তিনি খ্যাতনামা বাঁশিবাদক গাজী আব্দুল হাকিমকে বিয়ে করেন।

লালন সাঁইয়ের গানকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে ফরিদা পারভীনের অবদান অসামান্য। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে লালন সংগীত পরিবেশন করেছেন।

যদিও তিনি লালনগীতির জন্যই সর্বাধিক পরিচিত, তবুও তাঁর কণ্ঠে গাওয়া বেশ কিছু আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি,” “বাড়ির কাছে আরশিনগর,” ও “এই পদ্মা এই মেঘনা”–র মতো গানের মাধ্যমে তিনি ভক্তদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি তরুণ প্রজন্মকে লালনসংগীত শেখাতে ‘অচিন পাখি স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

সংগীতে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে অন্ধ প্রেম চলচ্চিত্রের “নিন্দার কাঁটা” গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি জাপানের ফুকুওকা পুরস্কার অর্জন করেন।

তিনি 'ফরিদা পারভীন' ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যানও ছিলেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ