জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস আজ
বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রাণপুরুষ, সাম্য, প্রেম, দ্রোহের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম প্রয়াণ দিবস আজ। বিদ্রোহী কবি, গীতিকার, সঙ্গীতজ্ঞ, বিপ্লবী ও মানবতার কণ্ঠস্বর নজরুল ছিলেন বাঙালির চিরন্তন অনুপ্রেরণা।
১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমানের চুরুলিয়ায় জন্ম নেওয়া নজরুল তার কবিতা, গান ও চিন্তাধারায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মানবতার জয়গান এবং প্রেম-ভালোবাসার সুর একসঙ্গে মিলিয়েছিলেন। তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ আজও বাঙালির মনে নতুন উদ্দীপনা জাগায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নজরুলের গান ও কবিতা প্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছিল। প্রায় আড়াই হাজার গান রচনা করে তিনি বাংলা সঙ্গীতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেন, যা আজও নজরুলগীতি নামে বাঙালির হৃদয়ে ধারণ করে আছে।
কবির জীবনে ছিল সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন শুরু থেকে ধূমকেতু পত্রিকা সম্পাদনা, ব্রিটিশবিরোধী লেখার কারণে কারাবাস সবকিছুই তাকে মানুষের মুক্তির কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কারাগারে থেকেও তিনি থামেননি, লিখেছেন রাজবন্দীর জবানবন্দি এবং অনশন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
যদিও তাকে বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের কবি বলা হয়, কিন্তু তার সাহিত্যকর্মে প্রেম, ভক্তি আর মানবতার সুরও সমান শক্তিতে ধ্বনিত হয়েছে। ফারসি ও আরবি শব্দের মিশ্রণে বাংলা সাহিত্যে তিনি এনেছিলেন ভিন্ন আঙ্গিক ও বৈচিত্র্য।
১৯৪২ সালে বিরল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে কবি হারান তার কণ্ঠ ও স্মৃতি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের সম্মতিতে ১৯৭২ সালে কবি ও তার পরিবারকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকত্ব দেয় এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক প্রদান করা হয়।
১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র নজরুল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আজ তিনি শুয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতির ভালোবাসার চিরন্তন আবাসে।
আজকের এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে এই মহৎ কবিকে, যিনি ছিলেন বিদ্রোহের প্রতীক, আবার প্রেম ও মানবতারও কবি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে