গত ১৫ মাসে ১০৭৩ সাংবাদিক হামলা-মামলা হত্যার শিকার: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর থেকে ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-হয়রানির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সংস্থাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, এই সময়ে কমবেশি ৪৭৬টি পৃথক ঘটনায় মোট ১০৭৩ জন সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৫ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) টিআইবি কার্যালয়ে ‘কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর জাফর সাদিক।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি:
* হামলা: ২৫৯টি ঘটনায় ৪৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন।
* চাকুরিচ্যুতি/বরখাস্ত: ৫টি ঘটনায় ১৮৯ জন সাংবাদিককে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া বা বরখাস্ত করা হয়েছে।
* হুমকি: ৮৯টি ঘটনায় ৯৯ জনকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
* হয়রানি: ৩০টি ঘটনায় ৭০ জনকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
* আটক: ১৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ২৭ জন গণমাধ্যমকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
* হত্যা: এই সময়ে ৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
* পরিবারের ওপর হামলা: ৯টি ঘটনায় ১৭ জন গণমাধ্যমকর্মীর পরিবারের সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন বা তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে।
টিআইবি জানায়, কর্তৃত্ববাদের পতনের পর সাংবাদিকতার জন্য অবাধ ও মুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে বলে যে আশা করা হয়েছিল, ১৬ মাসের বাস্তবতা সেই আশাকে ম্লান করে দিয়েছে। পূর্বের নেতিবাচক চর্চা হ্রাস না পেয়ে বরং ভিন্ন রূপে বিদ্যমান রয়েছে। বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা উন্নত (১৪৯তম) হলেও, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উত্তরণ ঘটেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও উচ্চ পদস্থ সাংবাদিকদের মধ্যে রাতারাতি বড় ধরনের রদবদল ঘটে। বিদ্যমান রাজনৈতিক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় এই পরিবর্তনগুলো আসে। এই সময়ে কমপক্ষে আটটি সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ১১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে বরখাস্ত কিংবা পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের নির্বাহী সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও পরিবর্তন আনা হয়। মালিকপক্ষ বা নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তত ২৯টি গণমাধ্যমের শীর্ষ পদে রদবদল ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, দৈনিক জনকণ্ঠ, একাত্তর, ডিবিসি ও সময় টেলিভিশনের মতো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব-সংশ্লিষ্ট নতুন সংবাদকর্মী ও ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যুক্ত হয়েছেন।
কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে সরকারি দলের ঘনিষ্ঠদের গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেওয়ার পুরোনো ধারা সংস্কারের সুপারিশ থাকলেও, এ বছরের মাঝামাঝিতে তথ্য মন্ত্রণালয় পুরোনো প্রক্রিয়াতেই নেক্সট টিভি এবং লাইভ টিভি নামে দুটি নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দেয়। এই চ্যানেল দুটির লাইসেন্স গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই নেতা পেয়েছেন। অন্যদিকে, বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেল ওয়ানে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং দিগন্ত টিভি ও আমার দেশ পত্রিকাও কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাময়িকীর সংখ্যা ৩২৭০টি। এর মধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে রয়েছে ৩৪টি (মোট ৫০টিরও বেশি)। নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংখ্যা ৪০৬টি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে