অব্যবস্থাপনা ও কারচুপির দৃষ্টান্ত জাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, চলছে গণনা। এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল। এদিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রদল। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিউজ বাংলাদেশের জাবি প্রতিনিধি কথা বলেছেন জাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষক শিক্ষক অধ্যাপক রায়হান রাইনের সঙ্গে।
ভিউজ বাংলাদেশ: সার্বিকভাবে জাকসু নির্বাচন কেমন হলো?
রায়হান রাইন: আশাব্যঞ্জক নয়। অনেক অনিয়ম, অনেক অব্যবস্থাপনা এবং কারচুপির দৃষ্টান্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এসব কারণে কয়েকটি প্যানেল থেকে প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনও করেছেন।
ভিউজ বাংলাদেশ: ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করেছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? বর্জনের পর জাকসু নির্বাচন কী গ্রহণযোগ্য হবে?
রায়হান রাইন: ছাত্রদল, সম্প্রীতির ঐক্য এবং সংশসপ্তকসহ কিছু প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেছে। কারণগুলো খুবই স্পষ্ট। নির্বাচনে প্রার্থীদের তরফ থেকে প্রথমে কোনো পোলিং এজেন্ট রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। ছাত্রদের দাবির মুখে সেটা মেনে নেওয়া হলো নির্বাচনের আগের রাতে। অনেক হলে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে পোলিং এজেন্ট ছাড়াই। পরে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হলেও তাদের লিস্ট রাখতে দেয়া হয়নি। অনেক বুথে ভোট দেয়ার প্রমাণ হিসেবে কালির ব্যবহার হয়নি। ফলে জাল ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এসব কারণে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এবং কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে।
এতগুলো প্যানেল থেকে প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করায় এই নির্বাচন মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রশাসনের উচিত নির্বাচন স্থগিত করে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সবার অংশগ্রহণে সুষ্টু ব্যবস্থায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা।
ভিউজ বাংলাদেশ: অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীকে সুবিধা দেয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব ছাপাখানা থেকে ব্যালট পেপার এবং ওএমআর ফরম ছাপিয়েছে, এ সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
রায়হান রাইন: এই অভিযোগ আছে। ওএমআর মেশিনে সফটওয়্যার দিয়ে ভোট রিডিংয়ের আশঙ্কা করেছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিত ছিল নিরপেক্ষ কোনো ছাপাখানা থেকে ব্যালট ছাপানো, যাতে কোনো অনাস্থার পরিবেশ তৈরি না হয়।
ভিউজ বাংলাদেশ: দীর্ঘদিন পর জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজনের নিশ্চয়তা তৈরি হবে?
রায়হান রাইন: একটা অনিশ্চয়তা তো তৈরি হলোই। প্রশাসন সুষ্টু ব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে এই অনিশ্চয়তা দূর করতে পারতো। কিন্তু শুরু থেকেই তারা পক্ষপাত দেখিয়েছে। সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে খুবই অন্যায্য কায়দায়।
ভিউজ বাংলাদেশ: যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলো সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে?
রায়হান রাইন: একটা বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রায়হান রাইন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা, জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদসহ পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে