'বাংলাদেশি' উল্লেখ করে এক বছরে ২২০০ জনকে ঠেলে দিয়েছে ভারত
চলতি ২০২৫ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লি পুলিশ রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জনকে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ উল্লেখ করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, যা বিগত বছরের তুলনায় নাটকীয় বৃদ্ধি নির্দেশ করছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১৪ জন এবং ২০২৩ সালে মাত্র ৫ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে চলতি বছরে এই সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যাওয়াকে বিশ্লেষকরা নজিরবিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখছেন।
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা বাংলাদেশি নাগরিক কিনা তার কোনো দালিলিক প্রমাণ দিল্লি পুলিশ নিশ্চিত করেনি।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি ও অন্যান্য নথি ব্যবহার করে স্থানীয় জনসমষ্টিতে মিশে বসবাস করছিল।
তবে সমালোচকরা বলছেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী মুসলিম নাগরিকদের জোরপূর্বক ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে সীমান্ত পার করা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ও আসামের একাধিক ঘটনার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বীরভূমের সোনালী খাতুন ও তার পরিবারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে অন্তঃসত্ত্বা সোনালী ও তার পরিবারকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। পরিবারের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রায় চার মাস বাংলাদেশে চরম দুর্ভোগের পর আদালতের আদেশে প্রমাণিত হয়, তারা ভারতীয় নাগরিক। চলতি মাসের শুরুর দিকে তারা ভারতে ফিরে যান।
আসামের নলবাড়ি জেলার সকিনা বিবির ঘটনাও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকার পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্ত সকিনা মে মাসে নিয়মিত হাজিরার জন্য গিয়েছিলেন, তবে নিখোঁজ হন। এক মাস পরে ঢাকার ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে যে তাকে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযানের ভুক্তভোগীরা পরিচয় সংকটের মুখে পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, এবং ভারতের তথাকথিত ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে