ঋতুস্রাব নিয়ে আইইউবি অধ্যাপকের বিতর্কিত মন্তব্যে ক্ষোভ, শাস্তির দাবি
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঋতুস্রাব, প্রজনন স্বাস্থ্য ও কিশোর-কিশোরীর শিক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীসহ ৩০০-এর বেশি নাগরিক।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা ড. হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার দাবিও জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৬ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে প্রকাশিত ওই পোস্টগুলোকে নারী বিদ্বেষী, বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল ও জনপরিসরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে নিন্দা জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে এই পোস্টগুলো মুছে ফেলা হয়।
ড. হোসেনের পোস্টগুলোর একটিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানোর সমালোচনা করে এটিকে ‘অন্ধভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এনজিও ও গণমাধ্যম ঋতুস্রাবকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে প্রচার করছে, যা একটি বাণিজ্যিক শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে।
আরেকটি পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, ২০০৫ সালের আগে পাঠ্যক্রম বা জনপরিসরে ঋতুস্রাব অন্তর্ভুক্ত ছিল না, এবং এনজিওগুলো অযথা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আরও লিখেছেন, শত বছর আগে নারীর জীবনে গড়ে ৪০ বার ঋতুস্রাব হত, কিন্তু এখন তা ৪০০ বার, কারণ নারীরা সন্তান নিতে চায় না। বিশেষজ্ঞরা এই দাবিকে বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে, ঋতুস্রাবের ঘনত্ব নির্ধারিত হয় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত কারণে, প্রজননের কারণে নয়। সমালোচকরা বলছেন, ড. হোসেনের বক্তব্য অল্পবয়সে মাতৃত্বকে উৎসাহিত করতে পারে এবং পরোক্ষভাবে বাল্যবিবাহকে বৈধতা দিতে পারে।
অন্য পোস্টে তিনি ঋতুস্রাব শিক্ষাকে ‘অশ্লীলতা’ আখ্যা দিয়েছেন, এটিকে ‘বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং পাঠ্যপুস্তকে এর অন্তর্ভুক্তিকে ‘ধর্মভিত্তিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক উদ্ধৃতিতে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি সাবধান না হলে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সফল হবে যখন আপনার সন্তান রাতের খাবারের টেবিলে ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।’
৩০০-এর বেশি নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক ও শিল্পী, ড. হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তার মন্তব্য নারীবিদ্বেষী, অবৈজ্ঞানিক এবং শিশু অধিকার ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বনহিশিখা, নিজেরা করি, দৃক, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইউবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা ও প্রমাণভিত্তিক শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকার বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের মন্তব্য দেশে বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করতে পারে এবং নারীর স্বাস্থ্যের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে