মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ আমলাতান্ত্রিক দখলে জিম্মি; সংস্কারবিরোধী চক্রের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণ: টিআইবি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫–এ ষড়যন্ত্রমূলক পরিবর্তনের মাধ্যমে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াকে আমলাতন্ত্রের করায়ত্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে সরকারি প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন কমিশন গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবি জানায়, অধ্যাদেশ প্রণয়ন–প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অন্ধকারে রেখে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কর্তৃত্ববাদী চর্চা অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা সংস্কারবিরোধী আমলাতান্ত্রিক চক্রের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বিব্রতকর দৃষ্টান্ত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৯ নভেম্বর ২০২৫ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশের পর কিছু দুর্বলতা থাকলেও এটি কমিশনকে আমলাতন্ত্রের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করার সুযোগ তৈরি করবে বলে অংশীজনরা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই ৮ ডিসেম্বর বাছাই কমিটিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে, যা সেই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি ধূলিসাৎ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাছাই কমিটিতে এই পরিবর্তন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মানবাধিকার কমিশনসহ দেশের বিভিন্ন কমিশনকে দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর করে রাখার যে সরকারি প্রভাবের চর্চা রয়েছে, সেটি অব্যাহত রাখারই একটি উদাহরণ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংশোধনের মাধ্যমে নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর আচরণ প্রতিরোধে জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যে ইতিবাচক বিধান যুক্ত করা হয়েছে, সেটিও কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়বে। কারণ শুধু বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করাই কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
এ ছাড়া কমিশনের আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে গৃহীত পদক্ষেপ কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে ‘অবহিত করা যাইবে’ শব্দ ব্যবহারের মতো বিধান যুক্ত করায় অধ্যাদেশটির ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলোও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টিআইবি অবিলম্বে সংস্কারবিরোধী আমলাতান্ত্রিক চক্রের কাছে আত্মসমর্পণের অবস্থান থেকে সরে এসে অধ্যাদেশে চাপিয়ে দেওয়া এসব বিধান বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের জন্য ৯ নভেম্বর ২০২৫ প্রকাশিত ৬২ নম্বর অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ৭–এ বর্ণিত বাছাই কমিটিতে কোনো আমলাতান্ত্রিক প্রতিনিধি ছিল না। তবে ৮ ডিসেম্বর গেজেটে প্রকাশিত সংশোধিত অধ্যাদেশে অংশীজনদের না জানিয়ে একতরফাভাবে বাছাই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য নিশ্চিতের উদ্যোগ হিসেবে দেখছে টিআইবি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে