Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশে নির্বিচারে আটক নিয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চায় এইচআরডব্লিউ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

ন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের নির্বিচারে আটক করতে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলেছে, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের উচিত হবে এসব আটককৃতদের মুক্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রতি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে তারা।

২০২৪ সালের আগস্টে তিন সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওই বিক্ষোভে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়। চলতি বছরের ১২ মে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে “অস্থায়ী” নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে দলটির সভা, প্রকাশনা ও অনলাইন কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে এই আইন ব্যবহার করে দলীয় নেতা–কর্মী ও শান্তিপূর্ণ কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে না শেখ হাসিনার আমলের মতো দলীয় পক্ষপাতমূলক আচরণে জড়ানো। জাতিসংঘের উচিত এখনই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার বন্ধে উদ্যোগ নেয়া।”

সংস্থাটি জানায়, সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হাজারো মানুষকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের অনেককে সন্দেহজনক হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে আটক ব্যক্তিদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে, যা আগের সরকারের সময়ের মতোই উদ্বেগজনক।

গত ২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মঞ্চ ৭১’-এর এক আলোচনা সভায় হামলার পর ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদও ছিলেন। অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যের অভিযোগ তুলে একদল লোক পণ্ড করে দেয়। কিন্তু পুলিশ হামলাকারীদের না ধরে বরং সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদেরই আটক করে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও ছিলেন।

এ ছাড়া ৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে জামিন শুনানির সময় আদালতে হেলমেট, হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরানো অবস্থায় হাজির করা হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আদালতে আরেক সাংবাদিককে সরকারি আইনজীবীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পান্নার এক আত্মীয় এইচআরডব্লিউকে বলেন, “ওটা ছিল একটি আলোচনা সভা, কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয়—তাহলে এটিকে সন্ত্রাসবাদ বলা হচ্ছে কেন?”

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সালে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি ২০২৫ সালে সংশোধন করা হয়। সরকারের দাবি, এর মাধ্যমে দলীয় সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, আইনটি শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ দমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদও সতর্ক করেছে, এই সংশোধনীগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হতে পারে। যদিও ড. ইউনূস মতপ্রকাশে কোনো বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এদিকে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ–সমর্থক ও নারী অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গণপিটুনিতে অন্তত ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত জুলাইয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার না করে সরকারের এখন উচিত নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া।”

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ