Views Bangladesh Logo

নির্বাচনের আগে সহিংসতার আশঙ্কায় আইআরআই’র সঙ্গে একমত সরকার

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

গামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্ভাবনা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) মূল্যায়নের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জানিয়েছেন, সরকার এই আশঙ্কা সম্পর্কে অবগত এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ফয়েজ আহম্মদ।

অক্টোবরে পরিচালিত প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আইআরআই জানায়, নির্বাচনি নিরাপত্তা জোরদারে নির্বাচন কমিশন সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। তবে এই উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো ভঙ্গুর রয়েছে।

আইআরআই জানায়, আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই মূল্যায়ন দল নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা জুলাই জাতীয় সনদে গিয়ে শেষ হয়েছে। এই সনদে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি প্রস্তাব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রায় প্রতিটি দিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যদিও সনদটি ব্যাপকভাবে অনুমোদিত, তবে পদ্ধতিগত অস্পষ্টতা, সময় এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন হওয়ায় এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন দেশের বাইরে ভোট দেয়ার সুযোগসহ অংশগ্রহণ ও পরিচালনাগত সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন সংস্কার এনেছে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস এখনো রয়ে গেছে।

আইআরআই মনে করে, তরুণ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের উত্থান এবং প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতার অভাব, নারীদের প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি এবং কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব অসহিষ্ণু রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে পারে— যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলতে পারে। জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা।

আইআরআই আরও উল্লেখ করে, ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ এখনো এক সংবেদনশীল রূপান্তর পর্যায়ে রয়েছে। এই রূপান্তর সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নের সক্ষমতার ওপর। জুলাই জাতীয় সনদ গণতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণের জন্য একটি নীলনকশা হিসেবে কাজ করছে, তবে এর বাস্তবায়ন অনেকাংশে আগামী সংসদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক মেরুকরণ প্রশমিত করতে এবং আস্থা পুনঃস্থাপনে দীর্ঘস্থায়ী সংলাপ, স্বচ্ছ নির্বাচন প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আইআরআই সতর্ক করেছে যে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো এখনো প্রভাবশালী হলেও তারা অভ্যন্তরীণ ও ভাবমূর্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে আছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নির্বাচনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এটি ভোটের দিন সহিংসতা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিক শ্রেণির মধ্যে আস্থার ঘাটতি ও আন্তঃদলীয় প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংঘাত বাড়িয়েছে। আইআরআই মনে করে, প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, দলাদলি ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে সীমিত করছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু দল তাদের নির্বাচিত এলাকায় অবাধে প্রচারণা চালাতে পারছে না, যা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক গতিশীলতা এখনো পরিবর্তনশীল। নতুন জোট ও উদীয়মান দলগুলো সংস্কার-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করবে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপর।

আইআরআই’র প্রতিবেদনে প্রকাশিত এসব শঙ্কার সঙ্গে একমত অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা বা নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বারবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ যেন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র না করে। এ বিষয়ে সরকার পুরোপুরি সচেতন এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইআরআই যে আশঙ্কার কথা বলেছে, তার সঙ্গে সরকারের কোনও দ্বিমত নেই। সরকার সক্রিয়ভাবে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ