মিয়ানমারকে করিডোর দেয়ার বিষয়টিকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ মিয়ানমারকে করিডোর দিয়েছে—এমন অভিযোগকে “সর্বৈব মিথ্যা” আখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাখাইন রাজ্যে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধে জাতিসংঘ মহাসচিব একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু এই প্রস্তাব কেবল আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। একে কেন্দ্র করে ‘করিডোর’ নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।”
তিনি বলেন, “এই অপপ্রচার হচ্ছে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্পের’ মতো। যারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, এটি তাদের কল্পনাপ্রসূত প্রচারণা। আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব—এ বিষয়ে সচেতন থাকুন, বিভ্রান্ত হবেন না।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, এর মধ্যে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় এই ইস্যু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় বিস্মৃত ছিল। এখন আমরা তা পুনরায় বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি জানান, গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান জানানো হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে উচ্চপর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আরও কেন্দ্রীভূত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “গত মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন—রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হলো মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি।”
তিনি উল্লেখ করেন, “গত এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে মিয়ানমার সরকার প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ‘প্রত্যাবাসনযোগ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি।”
সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আমাদের প্রচেষ্টা চলবে। বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা আমাদের লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে না।”
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে