Views Bangladesh Logo

শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ বাগছাস নেতার বিরুদ্ধে

রংপুরের হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতির বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ইমতিয়াজ ওই বিদ্যালয়ের অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার ১৯ দিন পার হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন টিফিন শেষে ক্লাস চলাকালীন ইমতিয়াজ মোটরসাইকেলে স্কুলে এসে সরাসরি অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফলাফল জানতে চেয়ে যাদের ফল অকৃতকার্য হয়েছিল তাদের নাম ধরে ডাকেন এবং কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করেন।

দশম শ্রেণির এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের একে একে ডেকে কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করেছেন। মেয়েরাও বাদ যায়নি। এ সময় তিনি গালিগালাজও করেছেন।’

কিছু শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বই বিতরণে দেরি ও নতুন সৃজনশীল পাঠ্যক্রমের কারণে তারা পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ফলে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। আহতদের মধ্যে একজনকে দুই দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে। সেই শিক্ষার্থীর চাচা জানান, পিটুনির কারণে তার হাত ফুলে গিয়েছিল এবং বাড়িতে এসে অনেক কেঁদেছিল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মতিতে ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে। তিনি এটিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ইমতিয়াজ আহম্মদ পরীক্ষার ফল নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই-চারজনকে হালকা পেটান, এটা বড় কোনো বিষয় নয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয়রা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।’

অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মদ জানিয়েছেন, তিনি স্কুলের সভাপতি হিসেবে ছয় মাস ধরে কাজ করছেন যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে। তিনি বলেন, ‘সেই জন্য একটু রাগারাগি করেছি, শাসন করেছি—এ ছাড়া কিছু নয়। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো অভিযোগ করেনি। আমি নিজেও এলাকার বড় ভাই হিসেবে শাসন করেছি। কিছু ব্যক্তি ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে এটি মীমাংসা হয়ে গেছে।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মদ হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হন। তখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। কমিটি বিলুপ্ত হলে ১৮ জুলাই তিনি বাগছাসের রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক হন।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে মোট ২৩০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

হারাটির স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষকের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পেটানো কোনোভাবেই শাসন নয়, এটি স্পষ্ট নির্যাতন। প্রধান শিক্ষকের উচিত ছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া, কিন্তু তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন।’

রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু জানাননি। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন অভিভাবক সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ জিডির তদন্ত করেছে। ইমতিয়াজ সভাপতি হিসেবে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন, পরে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ