Views Bangladesh Logo

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হয়েছে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ১১টায় পতেঙ্গা এমআই প্রান্তে এই পাইপলাইনের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, পতেঙ্গা ডেসপাস টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে এখন থেকে নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। পূর্বে নদীপথে ডিজেল পরিবহনে সময় লাগত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা, যেখানে পাইপলাইনের মাধ্যমে এখন মাত্র ১২ ঘণ্টায় তেল পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে বিপিসির অর্থায়নে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং চলতি বছরের মার্চে নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পতেঙ্গা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত অতিরিক্ত ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় নতুন একটি পেট্রোলিয়াম ডিপো নির্মিত হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন সময় ও ব্যয় উভয়ই কমে আসবে। এছাড়া সড়ক ও নদীপথে ট্যাংকার ব্যবহারের ঝুঁকি কমবে, যা দেশের জ্বালানি বিতরণ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও নিরাপদ। নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লার ডিপো থেকে দেশের অন্যান্য ডিপোতে তেল সরবরাহ করা যাবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই প্রকল্প প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আধুনিক বিশ্বের ভিত্তি হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত; প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে আসছে এবং মানবসম্পদ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সম্পদ নেই। তাই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে পেট্রোলিয়াম আমদানি খাতে চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিড করত। এখন ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান বিড করছে, যার ফলে বছরে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তিনটি মন্ত্রণালয়ে আমরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। সীমিত সম্পদের কথা বিবেচনায় এনে অপচয় ও দুর্নীতি কমানো অত্যন্ত জরুরি।’

প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে সমালোচনার জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে ব্যয় বেশি। শুধু ব্যয়ই নয়, বাস্তবায়নেও সময় বেশি লাগে। এই পাইপলাইন প্রকল্প ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যয় বেড়েছে এবং বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দুরূহ প্রকল্পটি তারা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে তারা আরও ব্যয় সাশ্রয়ী ও দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। আমাদের প্রকল্পগুলোতে নিজস্ব মূল্য সংযোজন খুবই কম। ভবিষ্যতে মূল্য সংযোজন বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। দেশের অনেক ইঞ্জিনিয়ার বেকার রয়েছেন। বিদেশি ঠিকাদারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।’

এ ব্যাপারে বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানান, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গত জুনে পরীক্ষামূলকভাবে ৩২ হাজার টন ডিজেল চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে সফলভাবে সরবরাহ করা হয়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ