Views Bangladesh Logo

হঠাৎ বন্ধ ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’, বিপাকে গ্রাহকরা

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

দেশের অন্যতম অনলাইন টিকিটিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ হঠাৎ করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। শনিবার আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়, এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে হাজারো গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্টে।

এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিমানের টিকিট, ভ্রমণ প্যাকেজ, ভিসা ও হজ প্যাকেজ কেনা বহু গ্রাহক এখন টিকিট খুঁজে পাচ্ছেন না, অনেকেই অর্থ ফেরতও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন।

শনিবার বিকেল থেকেই বহু গ্রাহক ঢাকার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে আসছেন এবং ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।

মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানান, অনেকেই অভিযোগ করছেন—ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানের অফিসে তদন্তের জন্য একটি দল পাঠিয়েছি। অফিসে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনেকদিন ধরে অনুপস্থিত। ওয়েবসাইট বন্ধ, কার্যক্রমও বন্ধ মনে হচ্ছে। আমরা এখনো পুরো তথ্য সংগ্রহ করছি।’

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আটাব) নেতারা বলছেন, তাদের অনেক সদস্য অভিযোগ করছেন—ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকপক্ষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট বিমানের টিকিট ও অন্যান্য সেবার জন্য তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা দিয়েছেন। যদি তারা সত্যিই প্রতারণা করে থাকে, তাহলে এটি বড় একটি কেলেঙ্কারি।’

তিনি জানান, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির দাবি তারা আগেও তুলেছিলেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে এক সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন।

‘এর আগেও লালট্রিপ, লেটস ফ্লাই ও টিকিট২৪ ডটকমের মতো প্রতিষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ হয়ে গ্রাহকদের ঠকিয়েছে। আমরা বারবার সরকারকে এ খাত নিয়ন্ত্রণে আনার অনুরোধ করেছি, কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সরকার উদ্যোগ নিলে এমন অবস্থা হতো না,’—বলেন তিনি।

জানা গেছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট গ্রাহক, ব্যবসায়িক এজেন্ট (বিটুবি) এবং দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনাদার। আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর কাছেও তাদের বড় অঙ্কের বকেয়া রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

শনিবার রাতে ফ্লাইট এক্সপার্টের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বার্তা পাঠান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালমান বিন রাশেদ শাহ সাইয়েম। সেখানে তিনি দাবি করেন, কোম্পানিতে একটি বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে।

বার্তায় তিনি লেখেন, "প্রিয় ফ্লাইট এক্সপার্ট টিম, আপনাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করতে চাই। একটি বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে—এর পেছনে সাইদ, হোসেন এবং সাকিব জড়িত। তারা এটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে করেছে এবং গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সব দায় আমার ওপর চাপিয়ে দেয়। এটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন, "আজ সকালে তারা ৩ কোটি টাকা তুলে নিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছে। কোম্পানিটি এখন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। আমি এখন হুমকি ও দোষারোপের মুখে পড়েছি, ফলে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরে যাচ্ছি। আমি দুঃখিত—আমার উদ্দেশ্য কখনও এমনভাবে চলে যাওয়া ছিল না।"

২০১৭ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। সহজ ব্যবহারযোগ্য ওয়েবসাইট, সাশ্রয়ী মূল্য এবং আকর্ষণীয় অফারের মাধ্যমে তারা দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিস্তিতে পেমেন্ট ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সুবিধার কারণে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ ভ্রমণকারীদের মধ্যে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বছরের পর বছর তারা দেশের শীর্ষ ডিজিটাল ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর একটি ছিল এটি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণাও চালাতো। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে টিকিট নিশ্চিত করতে বিলম্ব, গ্রাহকসেবার জবাব না পাওয়া এবং অর্থ ফেরত না পাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ