মধ্যস্থতাকারীকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ সম্ভব নয়
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি উদ্যোগ হচ্ছে, যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবেন তাদের নির্দিষ্ট হারে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে। সব প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করবেন তাদের আহরিত বিনিয়োগের ১ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে। এই বিনিয়োগ হতে হবে নতুন এবং কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ ও সম্পর্ক ব্যবহার করে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের চেষ্টা করে থাকেন। আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ নিশ্চিতভাবেই তাদের উৎসাহিত করবে।
এ ছাড়া স্থানীয়দের মধ্য থেকেও অনেকেই নানা প্রক্রিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করতে পারবেন। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি নিয়মিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছেন তাদের প্রেরিত সেই অর্থ স্থানীয় বেনিফিশিয়ারিরা প্রধানত বাড়ি-ঘর নির্মাণ অথবা জীবনযাপনের জন্য বিভিন্ন আবশ্যিক উপকরণ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করে থাকেন। প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরিত হয় তার অতি সামান্য অংশই আয় বর্ধক বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়। অথচ রেমিট্যান্স যদি আয় বর্ধক বিনিয়োগে ব্যবহার করা যেতো তাহলে দেশের আর্থিক চিত্র পাল্টে যেতে পারতো।
জনশক্তি রপ্তানি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ গঠনের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই; কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স বিনিয়োগে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিগত সরকার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভ্রান্তিকর নীতির কারণে রেমিট্যান্স বৈধপথের পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসতো। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স যদি বিনিয়োগে ব্যবহার করা যেত তাহলে দেশ উপকৃত হতে পারত। প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্থানীয় সুবিধাভোগীদের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের জন্য তেমন কোনো চেষ্টা না করলেও চলত।
বিডা বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীকে আর্থিক প্রণোদনা দেবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন উদ্যোগ। বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে যারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে চান তাদের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি আগ্রহের সৃষ্টি করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীদের আর্থিক প্রণোদনা দিলেই কি বিদেশি বিনিয়োগের জোয়ার সৃষ্টি হবে? বিদেশিরা কি দলে দলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ছুটে আসবে? প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আহরণে মধ্যস্থতা করার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে এটা নিশ্চিতভাবেই একটি ভালো উদ্যোগ; কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব আহরণ এবং তা ধরে রেখে বাস্তব বিনিয়োগে পরিণত করার জন্য এই উদ্যোগ তেমন কোনো অবদান রাখবে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশে রয়েছে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল সমারোহ। দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের সংখ্যা ১২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ভোক্তা শ্রেণির ব্যয়ের সামর্থ্য বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত প্রতিটি সরকারই বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন; কিন্তু রেজাল্ট কার্যত শূন্যই বলতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ পর্যাপ্ত পরিমাণে আহরিত না হওয়ার জন্য মূলত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব এবং বিনিয়োগ পরিবেশের ক্রমাবনতিই দায়ী। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম।
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বিজনেস রেডি নামে একটি নতুন সূচক প্রকাশ করেছে। ৫০টি উদীয়মান অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রণীত এই সূচকে বাংলাদেশকে চতুর্থ সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এমন বিনিয়োগ পরিবেশে কোনো বিদেশি উদ্যোক্তা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন। বিনিয়োগ একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রচেষ্টা। তাই যারা বিদেশ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন তারা প্রথমেই বিনিয়োগের বিদ্যমান বাস্তব পরিবেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন।
স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা নানা আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছে করলেই দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন না। তাই অনেকেই আছেন যারা অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিনিয়োগ পরিবেশ পছন্দ না হলে তারা অন্য যে কোনো দেশে বিনিয়োগের জন্য চলে যেতে পারেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন শীতের অতিথি পাখির মতো।
শীতের অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করেন না, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তেমনি কোনো দেশে পুঁজি ও জীবনের নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা না দেখলে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না। জোর করে বা কোনো প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায় না। সরকার বদল হলেই বিনিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন হবে না এমন নিশ্চয়তা থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে বিদেশি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আহরিত হবে না।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা আছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ হতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। চীন দেশে উৎপাদিত কোনো পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি করতে হলে ন্যূনতম পক্ষে ১২ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়; কিন্তু কোনো চীনা কোম্পানি যদি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে রপ্তানি করে তাহলে কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবে না। ফলে চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠানের কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি করতে পারে।
বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেই আমরা অত্যন্ত গর্ব ভরে বলে থাকি, বাংলাদেশে সস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিকের নিশ্চিত জোগান রয়েছে। তাই বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহী হবেন; কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু সস্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিক পাওয়া গেলেই বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করা যাবে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিকই অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ। অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি সব সময়ই কম হয়ে থাকে। সস্তায় প্রচুরসংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যায় এটা কোনো গর্বের বিষয় নয়। বরং এটা লজ্জিত হওয়ার মতো একটি বিষয়। জনশক্তি যদি প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ হয় তাহলে তা একটি দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আবার জনশক্তি যদি অদক্ষ এবং অপ্রশিক্ষিত হয় তাহলে তা দেশের সবচেয়ে বড় দায় হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
বিগত সরকার আমলে দেশের শ্রমশক্তিকে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বরং কীভাবে বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশে আসতে পারে সেই রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল মাত্র। বিগত সরকার আমলের দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বাস্তবায়িত হলে উৎপাদনশীল কারখানাগুলোতে কারা কাজ করবে বা শ্রমিক কোত্থেকে আসবে তা নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করা হয়নি। বরং বিদেশি শ্রমিকরা যাতে বাংলাদেশে এসে কাজ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আগে কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তিনি মাসিক বেতন-ভাতার ৭৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে দেশে প্রেরণ করতে পারতেন। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ অর্থ দিয়ে ট্যাক্স প্রদান এবং খাওয়া খরচ মেটানোর পর যা উদ্বৃত্ত থাকত, তা স্থানীয় কোনো ব্যাংকে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখতে হতো। কাজের চুক্তি শেষে বাড়িতে চলে যাবার সময় এই অর্থ তারা নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতিমালা পরিবর্তন করেছে।
পরিবর্তিত নীতি মোতাবেক, বাংলাদেশে কর্মরত কোনো বিদেশি শ্রমিক প্রতি মাসে যে বেতন-ভাতা পাবেন তার ৮০ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে নিজ দেশে প্রেরণ করতে পারবেন। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ অর্থ দিয়ে ট্যাক্স এবং খাবার খরচ মেটানোর পর যা উদ্বৃত্ত থাকবে তাও দেশে প্রেরণ করতে পারবেন। এতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কোনো কোনো দেশকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক এই আইনি পরিবর্তন করেছে। বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগযোগ্য পুঁজি নিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা তো শ্রমিক নিয়ে আসবেন না। তাই তারা দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শ্রমিক খুঁজবেন। তারা স্থানীয়ভাবে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শ্রমিকের জোগান দেওয়া না গেলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে দক্ষ শ্রমিক সংগ্রহের চেষ্টা করবেন। আমরা বিনিয়োগের কথা বলি ঠিকই কিন্তু কীভাবে বিনিয়োগ আসবে সে ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই।
মধ্যস্থতাকারীদের আর্থিক প্রণোদনা দিলেই দেশ বিনিয়োগে সয়লাব হয়ে যাবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিনিয়োগ আহরণ করতে হলে বাস্তব বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হবে। একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে অনেক রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্ভবত একজন বিনিয়োগকারীও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি কোনো ধরনের ঘুষ বা উৎকোচ প্রদান ব্যতীত তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অনেক বছর আগে বিনিয়োগ বোর্ড থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত বিনিয়োগের প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র ৩৯ শতাংশ বাস্তব বিনিয়োগে পরিণত হয়। অবশিষ্ট ৬১ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রত্যাহৃত হয়। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের নব্বইয়ের দশকে একজন বিনিয়োগকারী এসেছিলেন। তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও বসবাস করতেন স্পেনে। তিনি স্পেন শিল্প ও বণিক সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের ঋণের জন্য আবেদন করলে বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করা শুরু হয়। ঋণ অনুমোদন করার পর টঙ্গির ভাদামে জমি ক্রয় করতে গেলে স্থানীয় মাস্তানরা তাদের মাধ্যমে জমি ক্রয় করতে তাকে বাধ্য করেন। ব্যাংকের প্রতিটি পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ তার নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন।
এক পর্যায়ে ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার বরে স্পেনে চলে যান। এই হচ্ছে বাস্তবতা। বিডার সাবেক এক নির্বাহী পরিচালক বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করে বলেছিলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ডাবল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু বছর শেষে তিনি ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছিলেন। একবার জাপানের দুজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু তাদের জন্য শিল্প স্থাপনের মতো উপযুক্ত জমির ব্যবস্থা করা যায়নি। তিন পার্বত্য জেলার বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে; কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাঝে মাঝেই অশান্ত হয়ে ওঠে। এর মূলে রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় যদি শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যেত, তাহলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো এবং অশান্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে আসত।
বিডা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে চমক আছে ঠিকই কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রত্যাশিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করা যাবে না। এ জন্য আমাদের বিনিয়োগের বাস্তব পরিবেশ উন্নত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের স্বপ্ন দিবা স্বপ্নে পরিণত হতে বাধ্য।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে