বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন
বিনিয়োগ ব্যতীত কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। কোনো দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ হলেও সেই সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক সম্পদকে রূপান্তর এবং ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উপযোগিতা বাড়াতে হয়। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যারা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ; কিন্তু সেই সম্পদ ব্যবহারের জন্য যে আর্থিক সক্ষমতা থাকতে হয় তা নেই বলে বিদেশি কোম্পানির কাছে প্রাকৃতিক সম্পদ ইজারা দিতে হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে নেয়। আফ্রিকার অনেক দেশে এমন পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গেছে। তাই মর্যাদাবান কোনো দেশ তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ অন্য কোনো দেশের জিম্মায় দিতে চায় না।
বিনিয়োগের জন্য উদ্বৃত্ত অর্থের প্রয়োজন হয়; কিন্তু আমাদের মতো দেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কম থাকে বলে তারা বিনিয়োগের জন্য বিদেশি উদ্যোক্তাদের দ্বারস্থ হয়ে থাকে। যে দেশে অনুৎপাদনশীল রাষ্ট্রীয় খাতে বিনিয়োগ বেশি হয় সেই দেশ কখনোই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করতে পারে না। কারণ রাষ্ট্র ব্যবসায়ী বা উৎপাদক হতে পারে না। রাষ্ট্রীয় খাত অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করবে আর ব্যক্তি খাত সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। কোনো দেশে যদি রাষ্ট্রীয় খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয় তাহলে বুঝতে হবে সেই দেশে ব্যক্তি খাত উপেক্ষিত হচ্ছে।
আমরা যদি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তাহলে কী দেখব? বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছর স্বৈরাচারী শাসনামলে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে বিগত সময়ে আর কখনো তেমনটি হয়নি। উৎপাদনশীল ব্যক্তি খাতে উন্নয়নের চেষ্টা না করে শুধু অবকাঠামোগত খাতে উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। বিগত সরকারের উন্নয়নের মূল নীতি ছিল ‘অতি উন্নয়ন, অতি দুর্নীতি।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিগত সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশ থেকে মোট ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচারকৃত এই বিপুল অর্থের বেশিরভাগই এসেছে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে। রাষ্ট্রীয় খাতে উন্নয়নের নামে অর্থ লোপাট করা হয়েছে আর ব্যক্তি খাত উপেক্ষিত থেকেছে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ২৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও তা অর্জিত হয়নি। এমন কি সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও তা অর্জিত হয়নি। এখনো ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের জিডিপির ২২/২৩ শতাংশে উঠানামা করছে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়তই বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সংকটে ভুগে থাকে। ইচ্ছা থাকলেও উদ্যোক্তারা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পুঁজির জোগান দিতে পারেন না। উন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য সাধারণত পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভর করা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে পুঁজিবাজার এখনো সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি। এছাড়া পুঁজিবাজারে ঘটে যাওয়া বড় বড় কেলেঙ্কারির কোনো বিচার না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারের ওপর সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো আস্থা গড়ে উঠছে না।
একশ্রেণির উদ্যোক্তা নামধারী দুর্বৃত্ত ব্যাংক থেকে নানা প্রক্রিয়ায় নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। অনেকেই ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। ব্যাংকিং সেক্টর এখন আর উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো ঋণদানে সক্ষম হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত মার্চ মাসে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এটা দৃশ্যমান খেলাপি ঋণ। আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে যেসব খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এই অবস্থায় ব্যক্তি খাতে ব্যাংকনির্ভর বিনিয়োগের চিন্তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেশি মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে একটি উর্বর ভূমি হিসেবে গণ্য হবার দাবি রাখে। বাংলাদেশে রয়েছে ১৮ কোটি মানুষের উপস্থিতি। আগে বাংলাদেশের ১২ শতাংশ পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির। বর্তমানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের হার ২০ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। ভোক্তা শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা এবং ভোগ ব্যয়ের সামর্থ্যও বেড়েছে। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। অন্য কোনো কোনো দেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। কাজেই বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হতে পারেন। বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেই আমরা বলে থাকি বাংলাদেশে সস্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে বিদেশিরা শ্রম মজুরির এই তুলনামূলক সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন; কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের অধিকাংশই অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ। অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি কম হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। এ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। তারপরও বলা যায়, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু আমরা সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছি না।
বাংলাদেশ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে; কিন্তু আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি বয়স যখন ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হয় সেই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড বলা হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, একটি দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থা একবারই আসে। আবার কারও কারও মতে, হাজার বছরে একবার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়। যারা এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারে না তারা উন্নয়নের শিখরে উঠতে পারে না। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে চীন। চীন এক সময় তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আখ্যায়িত হতো। চীনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার সৃষ্টি হলে তারা সেই সুবিধা পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়েছে। ফলে তারা এখন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কয়েক বছর আগে বিশ্ব অর্থনীতিতে জাপানের ৪৪ বছরে আধিপত্যকে টপকে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যেই চীন অর্থনৈতিক শক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডিন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করলেও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এই সুযোগ কাজে লাগানোর কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখন আর উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো পুঁজির জোগান দেবার মতো অবস্থায় নেই। তাই আমাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের চেষ্টা জোরদার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের জন্য চেষ্টা করছেন; কিন্তু এতে খুব একটা সুফল অর্জিত হবে বলে মনে হয় না। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কারও মুখের কথায় বিনিয়োগ করতে আসবে না। এ জন্য কার্যকর বাস্তব বিনিয়োগ পরিবেশ প্রয়োজন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। আর আমাদের এখানে ঠিক উল্টোটিই ঘটছে। বিদেশি বিনিয়োগ সাধারণত দুভাবে আহরিত হতে পারে।
প্রথমত, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা ফরেন ডিরেস্ট ইনভেস্টমেন্ট আসতে পারে। অর্থাৎ বিদেশি উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী নিজে সরাসরি এসে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে এসে কোনো স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে মিলে যৌথভাবে প্রকল্প স্থাপন করতে পারেন। যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো উপযুক্ত ও বিশ্বস্ত স্থানীয় বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করা। স্থানীয় বিনিয়োগকারী যদি বিশ্বস্ত না হয় তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীর প্রতারিত হবার আশঙ্কা থাকে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন, ২০২৫-এ বিভিন্ন দেশের বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লিখিত বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ চিত্র খুব একটা আশাপ্রদ নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের বাংলাদেশ আহরিত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ মোট ১২৭ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণ করতে পেরেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। আগের বছর (২০২৩) বাংলাদেশ মোট ১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করেছিল। গত বছর যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তার পরিমাণ এক মাসের রেমিট্যান্স আয়ের অর্ধেক এবং রপ্তানি আয়ের এক-চতুর্থাংশ। গত বছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৯ কোটি মার্কিন ডলার যা মোট জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগের দেশ বাংলাদেশের তুলনায় বেশি পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের হার হচ্ছে জিডিপির ১৩ শতাংশ। ভারতের ক্ষেত্রে এটা ১৪ শতাংশ। ভুটানের বৈদেশিক বিনিয়োগের হার ছিল দেশটির জিডিপির ১৭ শতাংশ। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি মার্কিন ডলার। সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক বিনিয়োগের পরিমাণ দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
বিগত সরকারের আমলে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের জন্য নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কার্যত বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়নি। কারও মুখের কথায় বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণ করতে কার্যকর বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শীতের অতিথি পাখির মতো। শীতের অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করে না।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তেমনি কোনো দেশে তাদের পুঁজি ও জীবনের নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত মুনাফার সম্ভাবনা না দেখলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা নানা আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের বাইরে বিনিয়োগে যেতে পারেন না; কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেই সীমাবদ্ধতা নেই। তারা চাইলেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারেন। বিগত সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপক মাত্রায় দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার জের এখনো প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করে চলেছে। বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ করেছিল ১৭৬তম। বর্তমানে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। এর পরিবর্তে বিজনেস রেডি নামে নতুন একটি সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৫০টি দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ের পরিবেশকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশকে চতুর্থ ক্যাটাগরিতে স্থান দেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ বোর্ড প্রতি বছর বিদেশি বিনিয়োগের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা বিভ্রান্তিকর। কোনো প্রকল্প বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধিত হলেই তাকে বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো হয়। তার আঙ্কটাড যে বিনিয়োগ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে ক্যাশ ট্রান্সফারের ভিত্তিতে বিনিয়োগ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ফলে প্রতিবারই বিনিয়োগ বোর্ড এবং আঙ্কটাডের বিনিয়োগ পরিসংখ্যানের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অফিসে দুর্নীতি এবং সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি কিছুটা কমেছে ঠিকই কিন্তু এটা বাস্তব চিত্র নয়। আগামীতে দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও ব্যাপক আকারে দুর্নীতি শুরু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বা বিদেশি যে বিনিয়োগের কথাই বলি না কেন অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ আহরিত হবে না। বিষয়টি আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে