Views Bangladesh Logo

৪১ স্বজনকে লন্ডনে নিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়রের ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, যিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের এনফিল্ড শহরের সাবেক মেয়র। তিনি বাংলাদেশ থেকে তার বন্ধু ও পরিবারের ৪১ সদস্যকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ।

এ ঘটনায় বর্তমানে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত চালাচ্ছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, লেবার পার্টির বহিষ্কৃত সদস্য আমিরুল বাংলাদেশ থেকে ৪১ জনকে অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাজ্যে আনার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তিনি তার দপ্তরের অফিসিয়াল এবং ভুয়া চিঠি ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে পাঠান, যেখানে তার কাউন্সিলের লোগো ও প্রতীক ব্যবহার করা হয়।

এসব চিঠিতে তিনি দূতাবাসের কাছে অনুরোধ করেন যেন ‘তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের ভিসা প্রক্রিয়া খুব সহজ’ হয়, কারণ তারা তার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

৪৭ বছর বয়সি আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে তদন্ত করছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া তার কাউন্সিলের স্বাধীন তদন্তে দেখা গেছে, তিনি তার পদের অপব্যবহার করে ‘পরিবার, বন্ধু ও পরিচিতদের ভিসা পেতে সাহায্য করে’ এবং ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের’ মাধ্যমে কাউন্সিলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরুল ইসলাম মেয়র হওয়ার এক বছর আগে থেকেই এ ধরনের পত্র পাঠিয়েছিলেন, যার কিছু মেয়র হওয়ার আগ মুহূর্তে পাঠানো হয়। মেয়র হওয়ার আগে তিনি ডেপুটি মেয়র ছিলেন।

২০২৪ সালের মে মাসে এনফিল্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেপুটি মেয়রের কাছ থেকে ভিসা সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে পাঠানোর বিষয়ে অবগত করলে তদন্ত শুরু হয়।

প্রতিবেদনটি ‘গোপন’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও টেলিগ্রাফ এটি ঘেঁটে দেখেছে যে, আমিরুল ইসলাম কিছু চিঠিতে তার বন্ধু ও আত্মীয়দের পাসপোর্ট নম্বর এবং জন্মতারিখও লিখে দিয়েছিলেন, যাতে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। কিছু চিঠি মেয়রের অফিস থেকে পাঠানো হলেও কিছু ভুয়া চিঠি এমনভাবে বানানো হয় যেন মনে হয় সেগুলো আসল এবং কাউন্সিলর আমিরুল নিজেই পাঠিয়েছেন।

২০২৪ সালের মে মাসে এক বছরের জন্য আলংকারিক মেয়র হন আমিরুল। তবে তার শপথ অনুষ্ঠানে ৪১ জন বাংলাদেশিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তদন্তে দেখা গেছে, মাত্র একজন বাংলাদেশি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন।

আমিরুল ইসলাম তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন, তার আগের মেয়ররাও নিকটাত্মীয়দের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে দপ্তরকে ব্যবহার করেছেন, তাই তিনিও একই কাজ করেছেন।

তদন্তে পাওয়া গেছে, তিনি মেয়রের দপ্তর থেকে ১৩টি চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং স্বীকার করেছেন আরও ছয়টি চিঠি প্রস্তুত করে নিজেই পাঠিয়েছেন। আরও ১১টি চিঠি নিয়ে সুস্পষ্ট তথ্য না থাকলেও তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন যে এ চিঠিগুলোও তিনি পাঠিয়েছেন।

কাউন্সিলের কর্মীরা এসব চিঠি লিখতে 'ইতস্তত' করায় আরিফুল চিঠি 'জাল' করে সেগুলো পাঠিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব চিঠিতে বলা হয়েছিল, যাদের ভিসার কথা বলা হয়েছে তাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এসব অতিথিদের খরচ নিজে বহন করা এবং তাদের নিজ বাড়িতে রাখার কথাও বলেছিলেন।

তদন্তে বলা হয়েছে, বিদেশি অতিথিদের শপথ অনুষ্ঠানে আনতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আবেদন গ্রহণযোগ্য হলেও, আমিরুল ইসলাম সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং তার পদ ও মর্যাদা ব্যবহার করে নিজ পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সুবিধা দিতে চেয়েছেন।

তবে আমিরুল ইসলাম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি দাবি করেন, তার স্বাক্ষর নকল করে ভিসা সুবিধা চাওয়া হচ্ছে এমন বিষয় জানতে পারার পর তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন এবং একটি এজেন্সি তার স্বাক্ষর জাল করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছে।

তিনি আরও জানান, যাদের ভিসার জন্য তিনি সুপারিশ করেছিলেন, তাদের কাউকেই ভিসা দেওয়া হয়নি এবং কেউ ব্রিটেনে আসতে পারেনি। অভিযোগ ওঠার পর ২০২৫ সালের জুন মাসে আমিরুলকে তার দল লেবার পার্টি সাময়িক বহিষ্কার করে।

এনফিল্ড কাউন্সিলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা মেয়রের বিরুদ্ধে হওয়া তদন্তগুলোকে সমর্থন জানান এবং তাকে কিছু নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন করে আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা, আচরণবিধির প্রশিক্ষণ নেয়া এবং পুরনো মেয়র ব্যাজ পরিধান না করা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ