Views Bangladesh Logo

ডাকসুর প্রার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দেয়া শিক্ষার্থীর শাস্তি দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের একজন নারী প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগে একজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণের ঘোষণা দিয়ে আরও কিছু দাবিও জানিয়েছেন ঢাবির শিক্ষকরা।

৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী বাম ছাত্রজোটের ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্টটি করার অভিযোগ উঠেছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের আলী হোসেনের বিরুদ্ধে। ছাত্রশিবিরের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করেছিলেন ফাহমিদা।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাবির মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আলী হোসেনের ফেসবুক পোস্টের তীব্র নিন্দা জানায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের বদলে তাকে গণধর্ষণের জন্য মিছিল করা উচিত। যে বা যারা তাকে সমর্থন করবেন, তাদের সাথেও একই আচরণ করা হবে’।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার ও মোশাহিদা সুলতানা। এতে বলা হয়, ‘এটি কেবল একজন ব্যক্তির জন্য হুমকি নয়, বরং আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপরও আক্রমণ। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘৃণ্য আচরণ রোধে আলী হোসেনকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে’।

এই আপত্তিকর পোস্টের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আলী হোসেনকে ছাত্রশিবিরের সদস্য বলে অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রদল ও বেশ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন। অবশ্য পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় ছাত্রশিবিরও।

ডাকসুর প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আরও দুটি অভিযোগ দেয়ার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে ঢাবি প্রশাসন। সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারের নেতৃত্বে এই কমিটিতে আছেন সহকারী প্রক্টর সেহরিন আমিন ভূঁইয়া ও মো. রেজাউল করিম সোহাগ।

রোববার (৩১ আগস্ট) এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে ফাহমিদা আলমের রিট আবেদনে যুক্তি দেয়া হয়, ফরহাদ গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন। রিটকারী প্রশ্ন তোলেন, ছাত্রশিবিরের প্রার্থী হিসেবে তিনি কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

রিটের শুনানি শেষে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি তদন্তের পর ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরুর পর ওইদিনই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আপিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন চেম্বার আদালত।

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দাবিও জানায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেগুলো হচ্ছে, ভোটার সংখ্যার অনুপাতে ভোটকেন্দ্র ও ভোটদানের সময়সীমা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বাড়ানো, স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত শাস্তিসহ নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগ করা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের লক্ষ্য করে সাইবার বুলিং ও অনলাইনে হয়রানি মোকাবিলা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা দেয়া।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতায় জোর দিয়ে তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে ভোটদানে ব্যালট সরবরাহ, বুথ বরাদ্দ এবং সময় ব্যবস্থাপনার স্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপনসহ শিক্ষার্থীদের যেকোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক ও ন্যায্য সমাধান করতে হবে’।

অনলাইনের অপব্যবহারের বিষয়ে প্রশাসনকে ছাত্র ও শিক্ষকদের সম্পর্কে মানহানিকর বিষয়বস্তু ছড়ানো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ বা গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানায় শিক্ষকদের নেটওয়ার্ক।

তাহমিনা আরও বলেন, ‘এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল ব্যক্তিগত সুনামেরই ক্ষতি করে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও নষ্ট করে’।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা এবং সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানাও। নির্বাচনের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

প্রাথমিকভাবে ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করলেও পরে একদিন কমিয়ে ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষকরা প্রস্তাব দেন, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা স্থগিত করা হোক, তবে নিয়মিত ক্লাস চালু রাখা উচিত।

তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘শুধুমাত্র নির্বাচনের দিনই সম্পূর্ণ একাডেমিক বন্ধ থাকা উচিত। এই ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে আমরা সবপক্ষের সহযোগিতা আশা করি’।




মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ