ডাকসু নির্বাচন: ভোটারদের রায়কে সম্মান জানানোর আহ্বান হাসনাত আব্দুল্লাহর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে সাদিক কায়েম, জিএস পদে এস এম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মুহা. মহিউদ্দীন খান নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ভোটারদের রায়কে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ এই মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, ‘আজ ডাকসুতে যারা জিতবে, তারা কীভাবে দায়িত্ব নেবে এবং যারা হারবে, তারা কীভাবে পরাজয় গ্রহণ করবে- এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে আমাদের জাতীয় রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে।’
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পেশিশক্তি, জনশক্তি ও সংগঠিত উপস্থিতির মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছাত্র রাজনীতির নিজস্ব চরিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ডাকসু এখন শুধু ছাত্রদের ম্যান্ডেট বহন করছে না বরং জাতীয় রাজনৈতিক দলের এক্সটেনশন গেমে পরিণত হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।’
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভিন্ন মতের শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সবার প্রতি ‘ট্যাগ’ বসানোর প্রবণতার অভিযোগ করে তিনি লেখেন, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভিন্ন মতের শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সবার প্রতি গণহারে ট্যাগ বসানোর প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলের বিভাজন, সন্দেহ ও দমননীতির ধারাবাহিকতায় এই মানসিকতা রাজনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে অনিরাপদ ও সংকুচিত করবে।’
ছাত্র রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নিয়মিত নতুন নেতৃত্বের উত্থান এবং পরাজয়কে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সেই সংস্কৃতি তৈরির সূচনা হতে পারত, তবে ফলাফল গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।’
সকল রাজনৈতিক দলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘সকলের উচিত ভোটারদের রায়কে সম্মান করা। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি সহিষ্ণুতা। যাকে আমি পছন্দ করি না, তাকেও যদি জনগণ বেছে নেয়, সেটিকে সম্মান করাই গণতন্ত্র।’
সবশেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফল ভুগছে দেশ। এবার সময় এসেছে পরাজয়কে সম্মানিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার। অন্যথায় আগামী দিনের রাজনীতি থেকে যাবে কেবল জয়ীদের উল্লাস আর পরাজিতদের ক্ষোভে বন্দী, আর গণতন্ত্র কোনোদিন পূর্ণতা পাবে না।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে